রহস্যময় ডায়েরি
পুরনো রেলস্টেশনের নির্মল বাতাসে একটি নস্টালজিক
গন্ধ। দিনটি ছিল রবিবার, দুপুরের সূর্য আকাশে সোনালী রশ্মি ছড়াচ্ছিল। দীপমালা, একজন
তরুণী লেখিকা, স্টেশনের পাশে থাকা একটি পুরনো অ্যান্টিক শপের দিকে আকৃষ্ট হয়ে এগিয়ে
গেল। সেখানে তাকে কিছু পুরনো বই এবং ডায়েরির একটি স্তূপ দেখতে পেল।
একটি ডায়েরি বিশেষভাবে তার চোখে পড়ল। এটি
ছিল বাদামী রঙের, অতিরিক্ত ব্যবহৃত এবং একদম পুরনো। মনে হলো বহু সময় ধরে এটি কাউকে
আকৃষ্ট করতে পারেনি। দীপমালার কারণে এটি একটি অসাধারণ আবেশ তৈরি করেছিল। তিনি ডায়েরিটি
কিনে নিলেন।
বাড়ি ফিরে দীপমালা ডায়েরিটি খুললেন। প্রতিটি
পাতায় লেখা ছিল ভবিষ্যতের ঘটনা—কি হবে কিছুদিন পর, কিছু মাস পরে, এমনকি কয়েক
বছর পরে। প্রথম পাতার বিশাল লেখায় লেখা ছিল, "আগামীকাল বৃষ্টির পর তোমার জীবনের
নতুন সুযোগ আসবে।" তাঁর চোখ চমকে উঠল। সত্যিই, তিনি পরের দিন একটি বড় ব্লগিং প্রতিযোগিতার
জন্য ঘোষণা পেয়ে গেলেন।
ধীরে ধীরে, ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লেখা ঘটনা
সত্যি হতে লাগল। "তিন মাস পরে তুমি একটি নতুন শহরে যাবে, সেখানে নতুন বন্ধুদের
সাথে তোমার লেখার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।"—এই লাইনটি দীপমালাকে
উদ্বুদ্ধ করল। সত্যিই, তিন মাস পর তিনি একটি লেখক সম্মেলনের জন্য অন্য শহরে গেলেন,
যেখানে তিনি অনেক প্রেরণা পেলেন।
কিন্তু তারপর থেকে ডায়েরিটি যেন অস্বস্তিকর
হতে শুরু করল। একটি পাতায় লেখা ছিল, "একটি বড় বিপর্যয় তোমার জীবনে আসবে, যাতে
তোমার আনুমানিক বছর একের পর এক পরিবর্তিত হবে।" দীপমালা ইতিমধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের
চিত্র শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলেন। কিন্তু সেই বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চিন্তা করতেই
তার মনে অশান্তি তৈরি হল।
সময়ের দিকে যেতেই, দীপমালা লক্ষ্য করলেন
যে ডায়েরিতে লেখা একটি ঘটনা আসন্ন। "একুশের মধ্যে একটি নির্জন রাস্তার করলাপ হবে,
যেখানে তোমার হারানো শান্তি ফিরে আসবে।" সেইরকম একটি রাস্তা বিপর্যয়ের মাঝে দিয়েই
দিতে হয়। দীপমালা নির্জন স্রোতের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে, তিনি তার জীবন, গুণাবলি এবং
লক্ষ্যগুলোকে আবার নতুন করে চিন্তা করলেন। সেই নির্জন রাস্তা ছিল তার কাছে এক নতুন
শুরু, যেখানে তিনি দায়িত্ব নিলেন তার নিজের জীবন নিয়ন্ত্রণে। খবরের কাগজ পড়ে বাস্তবতা
উপলব্ধি করলেন।
ডায়েরির সেই শেষ পাতা ছিল নতুন একটি সম্ভাবনার।
"সংকটে উঠে দাঁঢ়ানোর পর, তুমি নতুন একটি উপন্যাস লিখবে, যা অনেকের মনে আশা এবং
সংকল্প জাগাবে।" দীপমালা সিদ্ধান্ত নিলেন আজকের পর থেকে তিনি তার জীবনকে নতুন
করে লিখতে শুরু করবেন।
পুরনো ডায়েরির প্রতিটি পাতায় লেখা ঘটনাগুলো
অবশ্যই ঘটেছিল, কিন্তু সেটি ছিল তার জন্য একটি পূর্বাভাস। ভবিষ্যত সবসময় লেখা থাকে
না, বরং তা তৈরি করা হয়। আর দীপমালা সেই পথে চলতে চান, যেখানে তার রচনার প্রতিটি শব্দ
একটি নতুন জীবন গড়বে।
এভাবেই পুরনো ডায়েরিটি তার জীবনের এমন এক
নতুন সূচনা করল, যা তাকে সামনে এগিয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করল।