হক সাহেবের গোপন সংকেত

 হক সাহেবের গোপন সংকেত

A distinguished older man with gray hair and glasses, wearing a tweed jacket and tie, stands facing a slender, teal-skinned alien with large black eyes and elongated fingers. They appear to be in conversation, gesturing with their hands towards each other. The backdrop is a rich, dark wood bookshelf filled with numerous old, bound books. The lighting is soft and focused on the two figures, highlighting their interaction.

হক সাহেব। পুরোদস্তুর একজন ইংরেজি শিক্ষক। কাঁধের ওপর ভর করে বসা ঘন কালো চশমা, সামান্য কুঁজো হয়ে হাঁটাচলার ধরন, আর সর্বক্ষণ খাতা বা বইয়ে মুখ গুঁজে থাকার স্বভাব – সব মিলিয়ে তাকে দেখলে নিপাট একজন অ্যাকাডেমিক মানুষ ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। স্কুলের সব শিক্ষক এমনকি ছাত্রছাত্রীরাও জানে, হক সাহেব মানুষটা ভয়াবহ সিরিয়াস। ক্লাসে ঢুকলে পিনপতন নীরবতা বজায় থাকে, কারণ তার পড়ানোর ভঙ্গিটিই এমন যে অন্য কোনোদিকে মন দেওয়ার জো থাকে না। ইংরেজি সাহিত্য, ব্যাকরণ বা ভাষার প্রতিটি সূক্ষ্ম দিক নিয়ে তার জ্ঞান অগাধ। শেক্সপিয়রের সনেট থেকে শুরু করে আধুনিক ইংরেজি উপন্যাসের প্রতিটি লাইন যেন তার নখদর্পণে। আর এই অগাধ জ্ঞান এবং সিরিয়াস প্রকৃতির কারণে তার আশেপাশে খুব বেশি লোকজনের ভিড় জমে না। টিচার্স রুমেও তিনি নিজের চেয়ারে বসে হয় পেপার পড়েন নয়তো খাতা দেখেন, অন্য শিক্ষকদের হালকা মেজাজের আলোচনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন।

কিন্তু হক সাহেবের এই বাইরের খোলসের আড়ালে লুকিয়ে ছিল সম্পূর্ণ অন্য একটি জগত। যে জগতের খবর তার স্কুলের কেউ তো নয়ই, সম্ভবত পৃথিবীর খুব কম লোকই রাখত। ইংরেজি শিক্ষক হলেও হক সাহেবের আসল প্রেম ছিল কম্পিউটার এবং মহাকাশ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। প্রথাগত কম্পিউটার সায়েন্স বা অ্যাস্ট্রোনমির ডিগ্রি তার ছিল না, কিন্তু নিজের অদম্য কৌতূহল আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি এই দুটি বিষয়ে এতটাই জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে অনেক পেশাদার বিজ্ঞানীও হয়তো অবাক হতেন

তার ছোট্ট ফ্ল্যাটের একটি ঘর ছিল তার এই গোপন জগতের কেন্দ্র। সেখানে ইংরেজি বইয়ের তাকের পাশে জায়গা করে নিয়েছিল নানা রকম ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, তারের জঞ্জাল, সার্কিট বোর্ড আর তিনটে বড় কম্পিউটার মনিটর, যা থেকে সারাক্ষণ অদ্ভুত সব ডেটা স্ক্রল হতে থাকত। স্কুলের ব্যস্ততা শেষ হওয়ার পর বা ছুটির দিনে হক সাহেবের জগৎ শুধুই ওই ঘরটুকু। রাতের পর রাত তিনি কাটিয়ে দিতেন স্ক্রিনের সামনে অপলক তাকিয়ে। তার এই নেশা শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে, যখন ইন্টারনেটের প্রসার সবে শুরু হয়েছে। সাধারণ কম্পিউটার শেখার আগ্রহ একসময় তাকে টেনে নিয়ে যায় অ্যাডভান্সড প্রোগ্রামিং, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি পর্যন্ত

হক সাহেবের মূল লক্ষ্য ছিল একটাই – বহির্জাগতিক প্রাণীদের থেকে আসা কোনো সংকেত ধরা। তিনি বিশ্বাস করতেন, মহাবিশ্ব এত বিশাল যে শুধু পৃথিবীই প্রাণের একমাত্র ঠিকানা হতে পারে না। কোথাও না কোথাও, কোনো এক গ্যালাক্সিতে বা অন্য কোনো সৌরজগতে অবশ্যই অন্য প্রাণের অস্তিত্ব আছে। আর সেই প্রাণীরা যদি উন্নত সভ্যতার অধিকারী হয়, তবে তারা হয়তো আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে নয়, বরং রেডিও তরঙ্গ বা অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছে

এই বিশ্বাস থেকেই হক সাহেব তার ফ্ল্যাটের ছাদে একটি ছোট, কিন্তু শক্তিশালী রেডিও অ্যান্টেনা বসিয়েছিলেন। সেটা অবশ্য কেউ বাইরে থেকে সহজে দেখতে পেত না। অ্যান্টেনা থেকে আসা তারগুলো সরাসরি তার কম্পিউটার রুমে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপরের কাজটা ছিল আরও কঠিন। মহাকাশ থেকে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ ডেটা আসে, তার মধ্যে থেকে একটি কৃত্রিম সংকেতকে আলাদা করা সুঁইয়ের ডগায় সরিষার দানার মতো। বেশিরভাগ সংকেতই আসে প্রাকৃতিক উৎস থেকে – পালসার, কোয়াসার, ব্ল্যাক হোল বা দূরবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জ। এদের নিজস্ব প্যাটার্ন আছে, যা বিজ্ঞানীরা জানেন। হক সাহেব রাত দিন খেটে যে কাজটি করতেন, তা হলো এই পরিচিত প্যাটার্নগুলোর বাইরে কোনো অচেনা, কৃত্রিম প্যাটার্ন খুঁজে বের করা

তিনি নিজের হাতে একটি জটিল সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। এই সফটওয়্যারটি অ্যান্টেনা থেকে আসা ডেটাকে রিয়েল টাইমে বিশ্লেষণ করত। সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি, মড্যুলেশন, রিপিটেশন রেট – সবকিছু মিলিয়ে সে একটা স্কোর তৈরি করত। কোনো সংকেতের স্কোর অস্বাভাবিক বেশি হলে সফটওয়্যারটি অ্যালার্ট দিত। বছরের পর বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলছিল। কত রাত যে তার চোখের সামনে দিয়ে ভোরের আলোয় মিশে গেছে, তার হিসেব নেই। কতবার যে সফটওয়্যার ভুল অ্যালার্ট দিয়েছে, কতবার যে ডেটার সমুদ্র থেকে প্রাকৃতিক গোলমাল ছাড়া আর কিছুই বেরিয়ে আসেনি, সে সব এখন ধূসর স্মৃতি

স্কুলের সহকর্মীরা তার এই কম্পিউটার নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকাকে এক ধরনের বাতিক হিসেবে দেখত। কেউ কেউ হাসাহাসি করত, কেউ আবার বলত ইংরেজি শিক্ষকের এ সবে কীসের দরকার! হক সাহেব এসব গায়ে মাখতেন না। তার কৌতূহল ছিল পাহাড়ের মতো অটল, আর ধৈর্য ছিল সমুদ্রের মতো বিশাল

একদিন, অন্য আর দশটা দিনের মতোই একটি রাত। অ্যান্টেনা থেকে ডেটা আসছে, কম্পিউটার রান হচ্ছে, আর হক সাহেব তার প্রিয় কফি মগ হাতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। টাইমস্ট্যাম্প দেখাচ্ছে রাত ২টো ৩৯ মিনিট। হঠাৎ করেই একটা মনিটরের স্ক্রিনে অ্যালার্ট বেজে উঠল। একটা অদ্ভুত ফ্রিকোয়েন্সিতে খুব শক্তিশালী একটা বাস্ট ডেটা ধরা পড়েছে। হক সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। এ রকম শক্তিশালী বাস্ট আগে অনেকবার পেয়েছেন, কিন্তু সেগুলোর উৎস সব সময়ই প্রাকৃতিক ছিল। এবারের ফ্রিকোয়েন্সিটা কেমন যেন অপরিচিত

সফটওয়্যার ডেটা বিশ্লেষণ শুরু করল। প্রাথমিক বিশ্লেষণেই সফটওয়্যার অস্বাভাবিকতার রিপোর্ট দিল। সংকেতের প্যাটার্নটা কোনো প্রাকৃতিক উৎসের মতো নয়। এতে একটা অদ্ভুত রিপিটেশন আছে, একটা ছন্দ। হক সাহেবের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। তিনি দ্রুত হাতে কিবোর্ডে টাইপ করতে শুরু করলেন। ডেটাগুলোকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য নতুন প্যারামিটার সেট করলেন

যত ডেটা প্রসেস হতে লাগল, হক সাহেবের উত্তেজনা তত বাড়তে লাগল। সংকেতটা শুধু রিপিটেটিভই নয়, এর মধ্যে একটা নির্দিষ্ট গঠনও দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ খুব ধীরে ধীরে, খুব সুচিন্তিতভাবে কিছু পাঠাচ্ছে। যেন তারা নিশ্চিত করতে চায় যে সংকেতটা কেউ ধরতে পারুক বা না পারুক, এর কৃত্রিমতা যেন স্পষ্ট বোঝা যায়

তার ইংরেজি শিক্ষক সত্তা এই মুহূর্তে তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে এক নতুন মাত্রা যোগ করল। ভাষা নিয়ে তার পড়াশোনা তাকে শিখিয়েছে প্যাটার্ন রিকগনিশন, সিনট্যাক্স, শব্দের গঠন, অর্থ তৈরির প্রক্রিয়া। তিনি সংকেতটিকে একটি অজানা ভাষা হিসেবে দেখতে শুরু করলেন। না, অবশ্যই এটি কোনো পরিচিত ভাষার শব্দ নয়, কিন্তু এর মধ্যে কি কোনো ব্যাকরণ বা লজিক্যাল গঠন থাকতে পারে?

তিনি সিগন্যালের ডেটাগুলোকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে দেখতে লাগলেন। বাইনারি কোড, ভিজ্যুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন, সাউন্ড মড্যুলেশন – সব রকম চেষ্টা করতে লাগলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল। ভোরের আলো যখন প্রায় উঁকি দিচ্ছে, তখন হক সাহেবের কম্পিউটারের একটি স্ক্রিনে কিছু অদ্ভুত ছবি ফুটে উঠল। ডেটাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট অ্যালগরিদমে সাজানোর পর এগুলো তৈরি হয়েছে। ছবিগুলো সরল জ্যামিতিক আকারের – বৃত্ত, ত্রিভুজ, সরল রেখা। কিন্তু এগুলোর বিন্যাসটা খুবই সুশৃঙ্খল, যেন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আঁকা হয়েছে

হক সাহেব হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। এটা কী? এটা কি তবে ভিনগ্রহের প্রাণীদের পাঠানো কোনো ভিজ্যুয়াল মেসেজ? ছবিগুলো পর পর আসতে লাগল। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে নয়টি বস্তু একটি বড় বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সূর্য ও সৌরজগতের ইঙ্গিত? পরের ছবিতে একটি নির্দিষ্ট বস্তুকে হাইলাইট করা হয়েছে, যা সম্ভবত তাদের নিজেদের গ্রহ। এরপর কিছু গাণিতিক সমীকরণ, কিছু রাসায়নিক সংকেত – সম্ভবত তাদের পরিবেশ বা জীবনের মৌলিক গঠন সম্পর্কে তথ্য। এবং সব শেষে একটি ছবি – দুটি আলাদা আকৃতি একে অপরের দিকে হাত বাড়াচ্ছে, বা মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছে

হক সাহেবের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। এত বছরের পরিশ্রম, এত রাতের নির্ঘুম অপেক্ষা, এত মানুষের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ – সব সার্থক হয়েছে। তিনি পেরেছেন! একা একা, নিজের চেষ্টায় তিনি মহাবিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে আসা একটি কৃত্রিম সংকেত ধরতে পেরেছেন। তিনি শুধু সংকেতই ধরেননি, প্রাথমিক পর্যায়ে সেটিকে ব্যাখ্যাও করতে পেরেছেন

তার হাত কাঁপছিল। কী করবেন এখন? এই অবিশ্বাস্য আবিষ্কারের কথা কাকে বলবেন? সরকারি কোনো সংস্থা? কোনো বিজ্ঞানী? তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক? এক মুহূর্তের জন্য তিনি ভাবলেন সবাইকে জানানোর কথা। কিন্তু পর মুহূর্তেই তার মনে এলো এতদিন ধরে যে একাগ্রতা আর গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজটি করেছেন, তার কথা। এই সংকেতের মানে যে কত গভীর, তা কি তিনি পৃথিবীর মানুষকে বোঝাতে পারবেন? নাকি এই নিয়ে শুরু হবে উন্মাদনা, ভয়, সামরিক প্রস্তুতি?

হক সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন। না, এখনই তিনি কাউকে কিছু জানাবেন না। এই সংকেতটা তার, আর যারা পাঠিয়েছে তাদের মধ্যকার একটি সেতু। এই মুহূর্তে এই সেতুটির ভার শুধু তাকেই বহন করতে হবে। তিনি আরও ডেটা বিশ্লেষণ করবেন, আরও সংকেত ধরার চেষ্টা করবেন, এবং হয়তো তাদের সাথে যোগাযোগের একটি প্রতি-সংকেত পাঠানোর চেষ্টা করবেন

পরের কয়েক সপ্তাহ হক সাহেব যেন অন্য জগতে চলে গেলেন। স্কুলের ক্লাসগুলো তিনি যান্ত্রিকভাবে নিতে লাগলেন, তার ছাত্রদের অসাধারণ পড়া বোঝানোর ক্ষমতা যেন কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে গেল। তার পুরো মনোযোগ ছিল রাতের বেলায়, তার কম্পিউটার রুমে, সেই ভিনগ্রহী সংকেতের রহস্য উদ্ঘাটনে। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই সংকেতটি হয়তো একটি দীর্ঘ বার্তার প্রথম অংশ মাত্র

তিনি চেষ্টা করলেন সংকেতের উৎস খুঁজে বের করার। তার সাধারণ সরঞ্জাম দিয়ে এর সঠিক উৎস নির্ধারণ করা কঠিন, তবে তিনি একটা মোটামুটি আইডিয়া পেলেন। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরই একটি দূরবর্তী অংশে, একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে ইঙ্গিত করছে সংকেতটি। দূরত্ব আলোকবর্ষের হিসাবে অনেক, কিন্তু সংকেতটি যেহেতু এসে পৌঁছেছে, তার মানে তারা হয়তো অনেক শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ব্যবহার করেছে, অথবা সংকেতটি হয়তো অনেক পুরনো, যা এতদিন ধরে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল

হক সাহেব ধীরে ধীরে ভিনগ্রহীদের পাঠানো ভিজ্যুয়াল ডেটাগুলোকে আরও পরিষ্কার করলেন। ছবিগুলো আরও স্পষ্ট হলো। তাদের গ্রহ, তাদের সৌরজগতের গঠন, তাদের পরিবেশের মৌলিক উপাদান – সবকিছুই যেন সরল চিত্রের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটা ছিল একটি সর্বজনীন ভাষা – গণিত এবং বিজ্ঞান। আর হক সাহেব, যিনি ভাষার শিক্ষক, তিনি ভাষা ছাড়াই সেই ভাষার অর্থ উদ্ধার করতে পারছিলেন

সবচেয়ে অবাক করা ছবি ছিল শেষেরটি। দুটি ভিন্ন আকৃতির জীব একে অপরের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এটা কি বন্ধুত্বের আহ্বান? নাকি তাদের সভ্যতা এবং আমাদের সভ্যতার মিলনের আকাঙ্ক্ষা? এই প্রশ্নগুলো হক সাহেবকে ভাবাতে লাগল। তারা কি শান্তিপ্রিয়? নাকি তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?

এই সব ভাবতে ভাবতে হক সাহেবের মনে হলো, তার ইংরেজি ভাষার জ্ঞান হয়তো এখানে কাজে লাগতে পারে। ভাষার মূল উদ্দেশ্য যোগাযোগ স্থাপন। তিনি ভেবে দেখলেন, যদি তিনিও সরল, সর্বজনীন ভাষায় তাদের কাছে একটি মেসেজ পাঠান, তাহলে কেমন হয়? কী থাকতে পারে সেই মেসেজে?

তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দুটি জিনিস পাঠাবেন। এক – পৃথিবীর অবস্থান (সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য, পৃথিবী তৃতীয় গ্রহ)। দুই – মানুষের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য (ডিএনএ-এর গঠন, শরীরের গড় আকার) এবং একটি সরল শুভেচ্ছা বার্তা। এই তথ্যগুলোকেও তিনি গাণিতিক সংকেত আর সরল জ্যামিতিক আকার ব্যবহার করে এনকোড করলেন। কয়েকদিন ধরে চলল এই জটিল এনকোডিংয়ের কাজ

অবশেষে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত এল। হক সাহেব তার অ্যান্টেনাটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ঘুরিয়ে তার তৈরি করা সংকেতটি মহাকাশে পাঠালেন। আলো বা রেডিও তরঙ্গের গতিতে সেই সংকেত লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ পাড়ি দেবে। হয়তো যারা সংকেত পাঠিয়েছে, ততদিন তাদের সভ্যতার অস্তিত্বই থাকবে না। হয়তো অন্য কোনো গ্রহের প্রাণী এই সংকেত পাবে। অথবা হয়তো অনন্ত মহাকাশে সংকেতটি হারিয়ে যাবে। কিন্তু হক সাহেব জানতেন, তিনি চেষ্টা করেছেন। মানবজাতির পক্ষ থেকে একটি একা মানুষের পক্ষ থেকে তিনি মহাবিশ্বের অন্য কোনো সভ্যতার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন

স্কুলের গম্ভীর ইংরেজি শিক্ষক হক সাহেব তার ছোট্ট ফ্ল্যাটের কম্পিউটার রুমে বসে মহাবিশ্বের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন একা, লোকচক্ষুর আড়ালে, কিন্তু তার কাজ ছিল কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যতের সাথে জড়িত। তার এই আবিষ্কারের কথা পৃথিবী কবে জানতে পারবে, আদৌ কখনো জানতে পারবে কিনা, তা কেউ জানে না। কিন্তু হক সাহেবের জীবনে সব বদলে গিয়েছিল। তিনি আর শুধু শেক্সপিয়রের সনেট বা গ্রামারের নিয়ম পড়ানো একজন শিক্ষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন দুই ভিন্ন জগতের মধ্যে যোগাযোগের প্রথম মাধ্যম, এক নীরব দূত। আর তার অ্যান্টেনা রাতের পর রাত মহাকাশের গভীর নীরবতা থেকে আরও সংকেতের অপেক্ষায় কান পেতে রইল। হয়তো একদিন উত্তর আসবে... অথবা হয়তো আসবে না। কিন্তু অনুসন্ধান থেমে থাকবে না। হক সাহেব জানতেন, তার কাজ সবে শুরু হয়েছে। মহাবিশ্বের ভাষা শেখা, আর শেখানো – তার প্রধান কাজ


আরও গল্প পড়তে ক্লিক করুন- The World of Stories

 

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم

Ad

Ad