Animal Farm: অ্যানিমেল ফার্ম-কাহিনী সংক্ষেপ
"Animal Farm" (অ্যানিমেল ফার্ম) জর্জ অরওয়েলের একটি প্রতীকী উপন্যাস, যা মূলত একটি ফ্যাবল হিসেবে লেখা। অনেক দিন পর আবার এটি পড়লাম। আমার মনে হয় এটি সবারই পড়া দরকার। এটি আপনাকে সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। আপনার মনের সপ্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এই উপন্যাসে।
কাহিনী সংক্ষেপ:
উপন্যাসটি একটি খামারের গল্প বলে, যার নাম ম্যানর ফার্ম, যেখানে একজন নির্দয় মালিক মিস্টার
জন্স পশুদের
উপর অত্যাচার চালায়। একদিন, খামারের
বৃদ্ধ স্তুতি, Old Major, এক
গভীর স্বপ্ন দেখে, যেখানে
তিনি তার সহকর্মী পশুদের উদ্বুদ্ধ করেন বিদ্রোহের জন্য। তিনি বলেন, "পশুদের একসাথে এসে মানুষদের
শাসন থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত", এবং একটি সমতামূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন, যেখানে পশুরা স্বাধীনভাবে
বসবাস করবে।
Old Major এর ভাষণে প্রভাবিত হয়ে খামারের সব পশু বিদ্রোহের
জন্য প্রস্তুত হয়। কিছুদিন পরে, Rebellion বা বিপ্লব ঘটে, যেখানে পশুরা মিস্টার জন্সকে তাড়িয়ে দেয় এবং
খামারটি দখল করে। এই বিপ্লবের পর পশুরা খামারের নাম পরিবর্তন করে Animal Farm রাখে,
এবং Seven Commandments (সাতটি আদেশ) তৈরি করে, যা তাদের নতুন সমাজের নিয়ম। এই আদেশগুলোর মধ্যে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, "সব
পশু সমান", যা
তাদের সমাজের মূল ভিত্তি ছিল।
নেতাদের উত্থান:
বিদ্রোহের পর, পশুরা নিজেদের শাসক হিসেবে পিগদের (শূকরদের) নির্বাচন করে।
দুইটি প্রধান নেতা হয়ে ওঠে Napoleon এবং Snowball। Snowball সমাজতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল
চিন্তা নিয়ে কাজ করতে চায়, যেমন
বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প। তবে, Napoleon ক্ষমতা দখল করতে এবং একতরফা
শাসন করতে চায়।
Snowball কিছু সময় পর ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং Napoleon একক শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
হয়। এরপর, Napoleon ধীরে
ধীরে তার শাসনক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে থাকে, এবং অন্যান্য পশুদের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাদের
আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি শোনে না।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার:
Napoleon এর শাসনে খামারে প্রথমে সমতামূলক এবং ন্যায্যতা ছিল,
কিন্তু ক্রমশ সে ক্ষমতার
অপব্যবহার শুরু করে। প্রথমে, পিগদের
দ্বারা তৈরি Seven Commandments পরবর্তীতে পরিবর্তিত হতে থাকে।
প্রথম আদেশ ছিল "সব পশু সমান", কিন্তু ধীরে ধীরে এই আদেশ পরিবর্তিত হয়ে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত, পিগরা নিজেদের মানুষের মতো
আচরণ করতে শুরু করে, তাদের
মধ্যে কিছু পশু ব্যবসা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তারা মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব
গড়ে তোলে।
একসময়, অন্য
পশুরা বুঝতে পারে যে তারা পুরানো শাসকের মতোই দমন-পীড়নের শিকার। তারা দেখতে পায়,
পশুরা এখন পিগদের মতো
কাজ করছে, তাদের
সামনে দাঁড়ানো বা দেখার মতো কোনো আদর্শ নেই।
শেষের দৃশ্য:
উপন্যাসের শেষে, একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হয়, যেখানে পশুরা জানায়, তারা আর তাদের সৃষ্ট সমতামূলক সমাজকে চেনেনা। পিগরা
তাদের নতুন আচরণে পুরোপুরি মানুষের মতো হয়ে গেছে। তারা না শুধু মানুষের মতো পোশাক
পরতে শুরু করেছে, বরং
পশুরা আর তাদের পার্থক্য খুঁজে পায় না। উপন্যাসের শেষে, "পাশাপাশি দাঁড়ানো দুটি
অবয়বের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না"—এটা দেখায় যে,
ক্ষমতার মধ্যে এমন এক
দুর্নীতি ঘটে, যেখানে
একটি বিপ্লবের পরেও সমাজের অবস্থা পূর্বের চেয়ে কোনো ভালো হয়নি।
সার্বিক থিম:
"Animal Farm" শুধু একটি খামারের গল্প নয়,
এটি একটি শক্তিশালী
রাজনৈতিক উপন্যাস, যা
বিপ্লবের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে। অরওয়েল এই উপন্যাসের মাধ্যমে ক্ষমতার
পক্ষে শাসকদের দুর্নীতি, প্রতিশ্রুতি
ভঙ্গ এবং জনগণের প্রতি অবিচারের সমালোচনা করেছেন। এটি মানুষের মধ্যে ক্ষমতার প্রতি
সতর্কতা এবং শাসকদের প্রতি চূড়ান্ত অবিশ্বাস গড়ে তোলে।