বাংলা গল্প: জমিদারের চিঠি
জমিদারের চিঠি
প্রাচীন ঢাকার ধুলো আর ইট-সুরকির গন্ধ মেখে একটি জীর্ণপ্রায় ল্যান্ড রোভার এসে
দাঁড়াল জমিদার হরিপদ দাসের পৈতৃক ভিটার সামনে। গাড়ির দরজা খুলে নামলেন তরুণ গবেষক
রায়হান। তার পরনে জিন্স আর টি-শার্ট, কাঁধে গবেষণাপত্রের ভারী ব্যাগ। চোখে একজোড়া কৌতূহলী চশমা পেছনে পড়ে থাকা এক
শতাব্দীর পুরনো ইতিহাসের গভীরতা মাপতে প্রস্তুত।
জমিদার বাড়ি! কথা নয়, যেন একটি জীবন্ত
শব্দকোষ। প্রতিটি ইটে মিশে আছে গল্প, প্রতিটি জানালায় সময়ের নীরব দীর্ঘশ্বাস। বাড়িটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। ফটকের
লোহার গেইট মরিচা ধরে জীর্ণ, লতা-পাতায় ঢাকা।
ভেতরে এককালে যে বাগান ছিল, তা এখন অরণ্যসম।
অতিকায় গাছেরা আকাশ ছুঁতে চাইছে, ছায়া ফেলছে জমিদার
বাড়ির কার্নিশে। রায়হান সেই বাড়িতে এসেছেন একটি বিশেষ ঐতিহাসিক গবেষণার কাজ নিয়ে—পুরান ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতির বিবর্তনে
জমিদার পরিবারের ভূমিকা। কিন্তু তার গবেষণার বিষয়বস্তুর বাইরেও একটি অলৌকিক অধ্যায়ের
মুখোমুখি হতে হবে, তা তিনি তখনও
জানতেন না।
স্থানীয়দের মধ্যে এই বাড়ি নিয়ে একটি অদ্ভুত গল্প প্রচলিত আছে। প্রতি শুক্রবার
রাতে নাকি অদৃশ্য এক হাত একটি পুরনো স্ট্যাম্পযুক্ত চিঠি এই বাড়ির ভাঙা দরজার নিচে
ফেলে যায়। বাড়ির ফটকে কোনো নাম ফলক নেই, কোনো ঠিকানা লেখা নেই, কেবল "জমিদার
বাড়ি" এই পরিচিতিই তার শেষ পরিচয়। এলাকাবাসী এটাকে ভূতের কাণ্ড বলে এড়িয়ে
চলে। রায়হান অবশ্য এসব গল্পে বিশ্বাসী নন। তার কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক ধাঁধা, যা তাকে সমাধান করতে হবে।
রায়হান তার জিনিসপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন। মেইন গেটটা
কোনোমতে ঠেলে খুলে ভেতরে ঢুকেই তার মনটা এক অজানা বিষাদে ভরে গেল। বিশাল
অট্টালিকার ভেতরে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বললেই চলে। চারপাশে ধুলোর আস্তরণ, ভাঙা আসবাবপত্র, দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ঘরের ভেতর মাকড়সার জাল আর বাদুড়ের রাজত্ব। এখানে
কেউ থাকে না, তবু কেমন যেন একটা প্রাণহীন উপস্থিতি
টের পাওয়া যায়। রায়হান সাবধানে পা ফেলে ভেতরে ঢুকলেন। একটা প্রশস্ত হলঘর, তার চারপাশে সারি সারি ঘর। একটা ঘর তুলনামূলকভাবে কম
ক্ষতিগ্রস্ত, সেটাই তিনি বেছে নিলেন তার অস্থায়ী
আস্তানা হিসেবে। একপাশে ক্যাম্প খাট বিছিয়ে নিলেন, ব্যাগের ভেতর থেকে ল্যাপটপ, নোটবুক আর কয়েকটি
পুরনো বই বের করে রাখলেন। দিনের আলোতে বাড়ির প্রতিটি কোণ পরীক্ষা করে দেখলেন।
বিকেলের নরম আলো যখন জমিদার বাড়ির ইঁটের গায়ে শেষ বারের মতো চুম্বন এঁকে যাচ্ছিল, তখন রায়হান টের পেলেন, এই বাড়ির প্রতিটি বাতাসেই যেন কেমন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা মিশে আছে।
প্রথম শুক্রবারের রাত। রায়হান তার ল্যাপটপে জমিদারির পুরনো কাগজপত্র
ঘাঁটছিলেন। রাত গভীর হচ্ছিল। বাইরে ঝিঁ-ঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক। হঠাৎই একটা খসখস
শব্দ। রায়হান চমকে উঠলেন। শব্দটা আসছে সদর দরজার দিক থেকে। তিনি টর্চলাইট হাতে
সাবধানে এগিয়ে গেলেন। সদর দরজার নিচে একটা সরু ফাঁক। সেই ফাঁকের নিচ দিয়ে একটা
সাদা খাম ভেতরে প্রবেশ করল। ঠিক যেমনটা গল্পের মতন। রায়হান বিস্ময়ে হতবাক হয়ে
দাঁড়িয়ে রইলেন। শব্দটা থেমে গেল। কেউ নেই। তিনি নিচু হয়ে খামটা তুললেন।
খামটা হাতে নিতেই রায়হানের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল। খামটা
অনেক পুরনো, হলদেটে হয়ে গেছে। ওপরে একটি
স্ট্যাম্প, যা আজকের দিনে ব্যবহার হয় না, সম্ভবত ব্রিটিশ আমলের। হাতের লেখাটা চমৎকার, কিন্তু তার চেয়েও অবাক করা বিষয় হল, চিঠির ভাষা! ১৯৪০-এর দশকের পুরনো বাংলা ভাষার চল। প্রমিত বা
পরিশীলিত অথচ বড্ড অপরিচিত। খামের ওপর কোনো ঠিকানা লেখা নেই, শুধু লেখা “জমিদার বাড়ি, ঢাকা”। রায়হান সাবধানে খামটা খুললেন। ভেতরে এক টুকরো চিঠি। ছোট্ট একটি চিঠি, কিন্তু তার প্রতিটি শব্দ যেন চিরায়ত এক বুকভাঙা আর্তি নিয়ে
চিৎকার করে বলছে:
“মায়া, আমাকে ক্ষমা করো।
আমার এই ভুলের জন্য আমি চিরকাল অনুতপ্ত থাকিব। তোমার অপেক্ষা আর সহ্যের সীমা
অতিক্রম করিয়াছি আমি। এই জন্মে তোমার কাছে আমার শেষ নিবেদন, যদি সম্ভব হয়, আমায় ক্ষমা করিও।”
চিঠিটা পড়ে রায়হান স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। ‘মায়া’? কে এই মায়া? কেন তাকে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে? এই চিঠিটা কে পাঠাচ্ছে, আর কেনই বা পাঠাচ্ছে? তার ঐতিহাসিক
গবেষণার আগ্রহ ছাপিয়ে এখন একটি ব্যক্তিগত রহস্যের উন্মোচন তার কাছে বেশি
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।
পরবর্তী কয়েকটা শুক্রবার একই ঘটনা ঘটল। প্রতিবারই একটি চিঠি, একই হাতের লেখা, একই পুরনো স্ট্যাম্প, এবং প্রতিটি
চিঠিতেই ‘মায়া’ নামের এক নারীর কাছে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে। ভাষা আর লেখার ধরণ দেখে
রায়হানের মনে হল, এই চিঠিগুলো একই
ব্যক্তি লিখেছিল, এবং সম্ভবত একই
সময়ে। কিন্তু সেগুলো কেন এখন প্রতি সপ্তাহে আসছে? ভূত?
নিশ্চয়ই না। তাহলে কি কোনো জীবিত ব্যক্তি, যে জানে এই বাড়ির রহস্য, সে এই কাজটি করছে? কিন্তু কেন?
রায়হান জমিদার পরিবারের ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করলেন। স্থানীয় লাইব্রেরি, পুরনো নথিপত্র, এমনকি কিছু বয়স্ক মানুষের সাথেও কথা বললেন। জমিদার হরিপদ দাসের কথা জানা গেল, তার তিন পুত্র ছিল – ভবানী শঙ্কর দাস, শিব শঙ্কর দাস এবং গিরি শঙ্কর দাস। ভবানী শঙ্কর ছিলেন
জমিদারির শেষ উত্তরাধিকারী, যিনি দেশভাগের সময়
প্রায় নিঃস্ব হয়ে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। কিন্তু ‘মায়া’ নামের কোনো নারীর অস্তিত্ব
খুঁজে পাওয়া গেল না। জমিদার বাড়ির কোনো সদস্যের নাম, কোনো অধীনস্থ কর্মচারী বা এমনকি কোনো আত্মীয়ের তালিকাতেও ‘মায়া’ নামটি নেই।
এই অনুপস্থিতিই যেন মায়াকে আরও রহস্যময় করে তুলল।
একদিন বিকেলে, জমিদার বাড়ির
পেছনের একটি অব্যবহৃত ঘরে রায়হান কিছু পুরনো বাক্সের সন্ধান পেলেন। বাক্সগুলোয়
ধুলোর আস্তরণ, ইঁদুরের উপদ্রব। সাবধানে একটি বাক্স
খুলতেই তার চোখ আটকে গেল। একটি পুরনো ডায়েরি। মলাটহীন, পাতাগুলো হলদেটে। ভেতরের লেখা প্রায় অস্পষ্ট। কিন্তু কিছু
পাতা পড়া যাচ্ছিল। এটি ভবানী শঙ্কর দাসের ডায়েরি।
ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে রায়হান এক নতুন আলোর সন্ধান পেলেন। ডায়েরির শেষ
দিকের কয়েকটি পাতায় ‘মায়া’ নামের উল্লেখ আছে। ‘মায়া’ ছিল জমিদার বাড়ির একজন সাধারণ
পরিচারিকা। তার রূপ ছিল মায়াময়, তার হাসি ছিল ভোরের
সূর্যের মতো স্নিগ্ধ। ভবানী শঙ্কর, জমিদার পুত্র হয়েও, মায়ার প্রেমে
পড়েছিলেন। তাদের সম্পর্ক ছিল গোপন, সমাজের চোখে নিষিদ্ধ। কিন্তু ভবানী শঙ্করের বাবা, হরিপদ দাস, যখন এই সম্পর্কের
কথা জানতে পারেন, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে
ওঠেন। জমিদার বাড়ির মান-সম্মান রক্ষার জন্য তিনি মায়াকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে
দিয়েছিলেন, এক শীতের রাতে, যেখানে তার কোনো আশ্রয় ছিল না। ডায়েরিতে লেখা শেষ দিকের
পাতাগুলো থেকে বোঝা যায়, ভবানী শঙ্কর এই
ঘটনার জন্য নিজেকে ভীষণভাবে দায়ী করতেন। তিনি অনুতপ্ত ছিলেন, মায়াকে সাহায্য করতে না পারার জন্য, তার পাশে দাঁড়াতে না পারার জন্য। শেষ কয়েকটি পাতায় ‘মায়া’কে
উদ্দেশ্য করে লেখা কিছু বাক্য, যা প্রতিটি চিঠির
মতোই – “মায়া, আমাকে ক্ষমা করো…”। ডায়েরির শেষ
পাতায় লেখা ছিল, "আমি চিঠি লিখি, কিন্তু কে পাঠাবে তাহাকে? আমার মায়া… আমায় ক্ষমা…।"
রায়হান শিউরে উঠলেন। মায়া নামের কোনো অস্তিত্ব হয়তো ছিল না, অথবা সে হয়তো চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু চিঠিগুলো কোথা
থেকে আসছে? আর কেনই বা প্রতি শুক্রবার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই রায়হানের সামনে উন্মোচিত
হলো এক বিস্ময়কর সত্য।
এক শুক্রবার রাতে, রায়হান চিঠি আসার
আগে থেকে দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। রাত গভীর হলো, বাতাস ভারী হয়ে উঠল। একটা হিমশীতল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল
চারপাশে। হঠাৎই, একটা হালকা খসখস শব্দ, যেন বাতাসের সাথে খসখসে পাতার ঘষা লাগার মতো। দরজার নিচ
দিয়ে একটি চিঠি ভেতরে এল। রায়হান তৎক্ষণাৎ চিঠিটা তুলে নিলেন। এবার তিনি অনুভব
করলেন,
ঘরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে অনেক কমে গেছে। কেমন যেন একটা ভারী, বিষণ্ণ উপস্থিতি তার চারপাশে। একটা দীর্ঘশ্বাস যেন বাতাসের
সাথে মিশে যাচ্ছে।
রায়হান বুঝতে পারছিলেন, এই চিঠিগুলো কেউ
বাইরে থেকে পাঠাচ্ছে না। এগুলো বাড়ির ভেতর থেকেই আসছে। কিন্তু কিভাবে? তার মনে হলো, কোনো এক অদৃশ্য সত্তা এই কাজটি করছে। ভবনীর শঙ্কর দাসের আত্মা। রায়হান
ডায়েরিতে পড়া শেষ কয়েকটি লাইন মনে করার চেষ্টা করলেন: "আমি চিঠি লিখি, কিন্তু কে পাঠাবে তাহাকে? আমার মায়া… আমায় ক্ষমা…"
রায়হান এবার নিজের কণ্ঠস্বরকে নিচু করে বললেন, "ভবানী শঙ্কর দা, আপনি কি এখানে আছেন?"
বাতাস আরও শীতল হয়ে উঠল। একটা পুরনো খাট হঠাৎ করে একটা কর্কশ শব্দ করে উঠল।
একটা মৃদু গন্ধ, পুরনো কাগজ আর শুকিয়ে যাওয়া কালির
গন্ধ। রায়হান বুঝলেন, তিনিই ঠিক। ভবানী
শঙ্করের আত্মাই এই বাড়িতে আটকে আছে। তার শেষ চিঠিটি লেখা শেষ হয়নি বলে, তার ক্ষমা চাওয়া পূর্ণ হয়নি বলে তার আত্মা মুক্তি পায়নি।
ভবানী শঙ্কর দাসের ডায়েরি আর চিঠির ভাষা মিলিয়ে রায়হান একটা জিনিস লক্ষ্য
করলেন। ডায়েরির একেবারে শেষ পৃষ্ঠায় একটি অসম্পূর্ণ চিঠির খসড়া ছিল। চিঠিটি ছিল
অন্যান্য চিঠির মতোই, ‘মায়া’কে উদ্দেশ করে
লেখা,
কিন্তু শেষ লাইনটি অসম্পূর্ণ ছিল। সম্ভবত, ভবানী শঙ্কর সেই চিঠিটি শেষ করার আগেই মারা গিয়েছিলেন। হয়তো
সেটাই তার শেষ চেষ্টা ছিল মায়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু এই অসম্পূর্ণতা তাকে
আটকে রেখেছিল। চিঠিটি শেষ হয়নি, তাই তার ক্ষমা
চাওয়াও যেন অসম্পূর্ণই রয়ে গিয়েছিল। আর তাই, তার আত্মা বারবার সেই অসম্পূর্ণ চিঠিটাকেই যেন সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছে, প্রতি শুক্রবার, এক অনন্ত অপেক্ষার মতো।
রায়হান অনুভব করলেন, এই মুহূর্তে তিনি
শুধু একজন গবেষক নন, তিনি একজন
মধ্যস্থতাকারী। তাকে এই আত্মাকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু কীভাবে? হয়তো ভবানী শঙ্কর দাসের অসম্পূর্ণ চিঠিটি শেষ করার মাধ্যমেই
তিনি তা করতে পারবেন।
সেই রাতেই, রায়হান ডায়েরির সেই অসম্পূর্ণ
পৃষ্ঠার পাশে একটি নতুন সাদা কাগজ রাখলেন। ডায়েরির লেখার ধরণ অনুকরণ করে, নিজের হাতে তিনি সেই অসম্পূর্ণ চিঠিটি সম্পূর্ণ করার চেষ্টা
করলেন। তিনি যেন অনুভব করতে পারছিলেন ভবানী শঙ্করের অব্যক্ত যন্ত্রণা, তার অনুশোচনা, তার মায়ার প্রতি ভালোবাসা। তিনি সেই চিঠির শেষ লাইনগুলো লিখলেন, যা ভবানী শঙ্কর হয়তো লিখতে চেয়েছিলেন:
“মায়া, আমি জানি আমি
অপরাধী। আমার কাপুরুষতা তোমায় আমার কাছ হইতে দূরে সরাইয়া দিয়াছে। কিন্তু আমার এই
অনুশোচনা,
এই ক্ষমা প্রার্থনা কি কোনদিন তোমার কাছে পৌঁছাইবে না? মায়া, আমি অসীম দুঃখের
সাগরে ডুবিয়া আছি। যদি তুমি আমায় ক্ষমা করিতে পারো, তবে আমার আত্মা শান্তি পাইবে। এই শেষ নিবেদন, তোমার ভবানী শঙ্কর।”
চিঠিটি শেষ করে রায়হান ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত নীরবতা অনুভব করলেন। যে ভারী
উপস্থিতি এতক্ষণ ছিল, তা যেন ধীরে ধীরে
হালকা হয়ে গেল। ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এল। প্রাচীন কাঠের মেঝেতে একটি ধুলো
মাখা বাতাস যেন ফিসফিস করে কিছু বলে গেল, যা রায়হান বুঝতে পারলেন না, কিন্তু অনুভব করলেন, তা ছিল এক গভীর শান্তির বার্তা।
পরের শুক্রবার, রায়হান গভীর
মনোযোগে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলেন। রাত গভীর হলো, কিন্তু কোনো চিঠি এল না। পরের শুক্রবারও না। এবং তারপরের শুক্রবারও না।
‘জমিদারের চিঠি’ আসা বন্ধ হয়ে গেল।
রায়হান বুঝলেন, ভবানী শঙ্কর দাসের
আত্মা মুক্তি পেয়েছে। মায়ার প্রতি তার ক্ষমা চাওয়ার চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা হয়তো পূরণ
হয়েছে। হয়তো অদৃশ্য মায়া তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে, অথবা সেই ক্ষমা চাওয়ার কর্মটা পূর্ণতা পেয়েছে, যা তার আত্মাকে মুক্তি এনে দিয়েছে।
রায়হান জমিদার বাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেন। তার গবেষণার কাজ শেষ। কিন্তু তিনি
যা শিখলেন, তা কোনো বইয়ে লেখেনি। ক্ষমা চাওয়া
কখনও কখনও শুধু জীবিতদের নয়, মৃতদের মাঝেও
শান্তির সূত্র হয়ে ওঠে। ভবানী শঙ্করের কাহিনী রায়হানের মনে গভীর রেখা কেটে গেল।
জমিদার বাড়িটা আর পরিত্যক্ত মনে হলো না, মনে হলো যেন এক দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে ওঠা এক পুরনো বন্ধুর মতো। নীরবতা আর
বিষণ্ণতার পরিবর্তে যেন এক অদৃশ্য শান্তি বিরাজ করছে। রায়হান তার ব্যাগ কাঁধে তুলে
বাড়ির দিকে শেষ বারের মতো তাকালেন। তিনি কেবল একজন ইতিহাস গবেষক নন, তিনি এখন একটি আত্মাকে মুক্তি দেওয়ার নীরব সাক্ষী। এই বাড়ির
ইতিহাস এখন শুধু ধুলো পড়া নথিপত্র নয়, এটি একটি প্রেমের, অনুশোচনার এবং শেষ
পর্যন্ত ক্ষমার গল্প।
এমএসহক
তাং ২৭/০৭/২০২৫