টানাপোড়েনের সুতোয় বাঁধা জীবন
খুলনার
মফস্বল শহরের শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে
রুবিনার জীবনটা ছিল সচ্ছল নদীর মতো। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট্ট শ্রেণিকক্ষ, চক আর ডাস্টারের গন্ধ,
ক্ষুদে
ক্ষুদে ছাত্রদের কলরব - এই ছিল তার জগৎ। আর ছিল তার একান্ত নিজস্ব পৃথিবী - স্বামী
আরিফ আর তাদের একমাত্র মেয়ে লিলি। লিলি তখন সবে পাঁচ বছরে পা রেখেছে। বাবাকে জড়িয়ে
ধরে আধো আধো বুলিতে কথা বলে, মায়ের আঁচল ধরে
স্কুলে না যাওয়ার বায়না ধরে। আরিফ ছিল বেসরকারি অফিসের সামান্য কর্মচারী, কিন্তু ভালোবাসা আর হাসিতে তাদের ছোট্ট সংসারটা ছিল
পরিপূর্ণ। ভবিষ্যৎ নিয়ে হয়তো বড় কোনো স্বপ্ন ছিল না, কিন্তু ছিল অফুরন্ত শান্তি।
সেই
শান্ত নদী হঠাৎ যেন বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলো। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই, কোনো রোগশোকের লক্ষণ ছাড়াই একদিন অফিসে কাজ করতে করতেই
স্ট্রোক করলেন আরিফ। সবকিছু শেষ। রুবিনার পায়ের নিচে মাটি সরে গেল। শোক, অবিশ্বাস আর চরম অসহায়ত্বে সে ডুবে গেল। লিলির মুখের দিকে
তাকিয়ে তার বুক ফেটে যেত। এইটুকু মেয়ে তার বাবাকে হারালো! আর সে নিজে হারালো
জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন।
খুলনায়
রুবিনার নিজের বলতে তেমন কেউ ছিল না। আরিফের পরিবার কিছুটা দূরে, তাদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এই অবস্থায় একা ছোট্ট লিলিকে
নিয়ে কীভাবে চলবে রুবিনা? চাকরি আছে বটে, কিন্তু খুলনার এই পরিবেশে একা একজন বিধবা নারীর পক্ষে সব
সামলে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ল। তার ঢাকায় থাকা ছোট ভাই রবি আর মায়ের কথা মনে পড়ল। রবি
ফোন করে জানতে চাইল, কী করবে আপা? মা বারবার বললেন,
"চলে
আয় ঢাকায়। আমরা তো আছি।"
অগত্য
নিরুপায় রুবিনা সিদ্ধান্ত নিল। খুলনা ছেড়ে সে ঢাকায় যাবে। কিন্তু তার সরকারি চাকরি? ডেপুটেশন (প্রেষণ) নেওয়ার চেষ্টা করল সে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, উপর মহলে অনেক অনুরোধ-উপরোধ করে অবশেষে কেরানীগঞ্জের একটি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ডেপুটেশন মঞ্জুর হলো। একরাশ অনিশ্চয়তা আর বুকভরা কষ্ট নিয়ে
রুবিনা তার ছোট্ট সাজানো সংসার ভেঙে ঢাকায় পাড়ি দিল। পেছনে পড়ে রইল চেনা শহর, আরিফের স্মৃতি আর একাকীত্বের ভয়।
ঢাকার
জীবন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছোট ভাইয়ের দুই কামরার ফ্ল্যাটে মা আর রবির সাথে এসে উঠল
রুবিনা। লিলি প্রথমে মানিয়ে নিতে পারছিল না। নতুন জায়গা, নতুন মুখ, বাবার অনুপস্থিতি
হয়তো তাকে আরও বেশি বিমর্ষ করে তুলেছিল। রুবিনার নতুন স্কুল, কেরানীগঞ্জের পরিবেশ,
সবকিছুই
তার কাছে অচেনা, প্রতিকূল মনে হতো।
সকালে তড়িঘড়ি করে স্কুলে যাওয়া, দুপুরে ফিরে এসে
লিলিকে সামলানো, মায়ের দেখভাল, রবির সাথে ছোটখাটো বিষয়ে মতপার্থক্য - সব মিলিয়ে জীবনটা
একটা নিরন্তর সংগ্রামের মতো মনে হতে লাগল। কিন্তু লিলির মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে
দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যেতে হতো।
কয়েক
বছর কেটে গেল। লিলি ঢাকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। রুবিনার স্কুল, তার সহকর্মীরাও চেনা হয়ে গেছে। ছোট ভাই রবির চাকরির উন্নতি
হয়েছে। মা বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল,
কিন্তু
রুবিনা ও লিলির প্রতি তার ভালোবাসার কমতি নেই। এই কয়েক বছরে রুবিনা একটু একটু করে
টাকা জমিয়েছে। আরিফের মৃত্যুর পর প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বাবদ কিছু টাকা পেয়েছিল,
তার
সাথে নিজের বেতনের জমানো অংশ। বাবার কাছ থেকেও কিছু টাকা পেয়েছিল। ছোট ভাই রবিও
সাহায্য করেছে। এই টাকাগুলো দিয়ে কেরানীগঞ্জেই একটুখানি জায়গা কিনে ফেলল তারা।
রুবিনা, রবি আর মায়ের স্বপ্ন ছিল একটা
ছোট হলেও নিজেদের বাড়ি হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, নিজেদের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে সেই ভিটেতে একতলা একটা বাড়ি উঠল। খুব বড় না হলেও এই
বাড়িটা ছিল তাদের কাছে একখণ্ড স্বর্গ।
লিলিকে
ঢাকার একটি ভালো স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। রুবিনার ডেপুটেশনটা আরও কয়েক বছর আছে
জেনে সে ভেবেছিল, লিলির পড়াশোনার জন্য
এটাই সেরা জায়গা। কেরানীগঞ্জের স্কুল থেকে ছুটির পর সে নিজে গিয়ে লিলিকে স্কুল
থেকে নিয়ে আসত, নয়তো মা বা রবি যেত। বাড়ি
হওয়ার পর জীবনটা যেন আরও একটু সহজ হলো। নিজেদের ছাদ, নিজেদের জায়গা। রুবিনা ভেবেছিল, এবার হয়তো কপাল ফিরল।
টানাপোড়েন হয়তো এবার শেষ হবে।
কিন্তু
নিয়তি বোধহয় অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে একটি চিঠি এল। অধিদপ্তর থেকে
আসা সেই চিঠিতে লেখা ছিল, রুবিনা বেগমের
ডেপুটেশন বাতিল করা হয়েছে। তাকে অবিলম্বে খুলনার মূল স্কুলে যোগদান করতে হবে।
রুবিনার
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কেন? এত বছর পর হঠাৎ কেন
এই সিদ্ধান্ত? ঢাকার এই জীবন, লিলির স্কুল, এই বাড়ি - সব ছেড়ে
তাকে আবার খুলনায় ফিরে যেতে হবে? এই কথাটা ভাবতেই তার
শরীর হিম হয়ে এল।
রবি আর
মাও হতবাক। বাড়িটা সবে হয়েছে, লিলি ঢাকার স্কুলে এত
ভালো করছে, এই সময় খুলনায় ফেরত যাওয়া
মানে তো সব তছনছ করে দেওয়া। রুবিনা ছুটাছুটি শুরু করল। মন্ত্রণালয়ের এই অফিস তো ওই
অফিস। সবাই শুধু বলে, "নিয়ম অনুযায়ী
ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হলে মূল স্কুলেই ফেরত যেতে হয়।" অনেক অনুরোধ, অনেক কান্নাকাটি করেও কোনো লাভ হলো না। ডেপুটেশন আর বহাল
হলো না।
কী
করবে রুবিনা? চাকরিটা তার কাছে খুব জরুরি।
এই চাকরি ছাড়া লিলিকে সে কীভাবে মানুষ করবে?
বাড়িটার
ঋণের বোঝা কীভাবে সামলাবে? কিন্তু লিলিকে নিয়ে
খুলনায় ফিরে যাওয়া? লিলির স্কুল বদলানো, এই পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে আবার নতুন জায়গায় যাওয়া, সেখানে গিয়ে একা একা সব সামলানো - এটা ভাবতেই তার মনটা
বিষিয়ে উঠল।
রবি
বলল, ”আপা, তুই খুলনা যা। লিলু এখানেই
থাকুক। মা তো আছেই, আমিও দেখছি। ওর
স্কুলটা খুব ভালো, ওকে এখান থেকে সরানো ঠিক হবে
না।"
মাও
সায় দিলেন, "হ্যাঁ রে রুবিনা, লিলুকে আমরা দেখব। তুই শুধু চাকরির জায়গাটা ঠিক রাখ।
আসা-যাওয়া করিস।"
সিদ্ধান্তটা
ছিল রুবিনার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি। নিজের সন্তানকে একা
রেখে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে চলে যাওয়া। কিন্তু আর উপায় ছিল না। লিলির ভালো
ভবিষ্যতের জন্য, তার পড়াশোনা যাতে ঠিক
থাকে, সেটার কথা ভেবে, আর ঢাকার এই বাড়িটার কথা ভেবে রুবিনা রাজি হলো। লিলি থাকবে
ঢাকায়, মামা আর নানীর কাছে। আর সে
ফিরে যাবে খুলনায়, তার পুরনো কর্মস্থলে।
বিদায়
জানানোর সে মুহূর্তটা ছিল রুবিনার জীবনের সবচেয়ে করুণ দৃশ্য। খুলনাগামী ট্রেনে
ওঠার সময় লিলি তার আঁচল ধরে কাঁদছিল,
"মা, তুমি যাবে না, আমাকে ছেড়ে যাবে
না।" রুবিনা হাজার চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল আটকাতে পারছিল না। লিলিকে বুকে
জড়িয়ে বারবার চুমু খেতে খেতে তার গলা বুজে আসছিল। মা আর রবির হাতে লিলিকে সঁপে
দিয়ে এক বুকচাপা কান্না আর তীব্র যন্ত্রণার পাথর নিয়ে ট্রেনে উঠল রুবিনা।
প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা লিলির ছোট্ট মূর্তিটা যতক্ষণ দেখা গেল, ততক্ষণ সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ট্রেন চলতে শুরু করলে
জানালা দিয়ে মুখ বাইরে দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল সে। ভেতরের আর্তনাদ যেন আকাশ
বাতাসকে ভারাক্রান্ত করে তুলল।
খুলনায়
ফিরে আসাটা ছিল একাকীত্বের আর বেদনার এক নতুন অধ্যায়। শহরের পরিবেশ একই আছে, স্কুল একই আছে,
সহকর্মীরাও
চেনা। কিন্তু রুবিনার ভেতরের পৃথিবীটা দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। পুরনো স্কুলে ঢুকলেই
আরিফের স্মৃতি ভিড় করে আসে। যে বাড়িতে সে এখন একা থাকে, প্রতিটা কোণায় যেন লিলির অভাব স্পষ্ট। সকালে ঘুম ভাঙলেই
প্রথম চিন্তা হয় - লিলি কী করছে এখন? স্কুল থেকে ফিরেছে? খেয়েছে ঠিকমতো?
প্রথম
প্রথম প্রতিদিন দুবেলা লিলির সাথে ফোনে কথা বলত রুবিনা। ভিডিও কল করে লিলিকে দেখত।
লিলি তার স্কুলের গল্প করত, নানুভাইয়ের বকা
খাওয়ার কথা বলত, মামা তাকে কী কিনে
দিয়েছে সেটা দেখাত। রুবিনা মন দিয়ে শুনত,
হাসার
চেষ্টা করত, কিন্তু বুক ফেটে যেত। লিলির
ছোট্ট মুখটা যখন বিষণ্ণ হয়ে জিজ্ঞেস করত,
"মা, তুমি কবে আসবে?"
রুবিনার
ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেত। কোনো উত্তর দিতে পারত না সে, শুধু বলত,
"শিগগিরই
আসব মা, খুব শিগগিরই।"
এই
আসা-যাওয়াটা ছিল আরেক যন্ত্রণার। মাসে একবার বা দুমাসে একবার, ছুটির সাথে ম্যানেজ করে রুবিনা ঢাকায় যেত। ট্রেনের দীর্ঘ
যাত্রা তার কাছে মনে হতো অনন্তপথ। কখন পৌঁছাবে, কখন লিলিকে দেখবে - এই প্রতীক্ষায় প্রতিটা মুহূর্ত কাটত। ঢাকা স্টেশনে নেমে
লিলিকে দেখলেই সব কষ্ট ভুলে যেত সে। লিলির মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এটা ওটা কিনে
নিয়ে যেত। কয়েকদিনের জন্য যেন সে সম্পূর্ণ রুবিনা হয়ে উঠত। মেয়েকে নিজে হাতে খাইয়ে
দেওয়া, চুল আঁচড়ে দেওয়া, স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করা - এই কয়েকটা দিনে সে যেন এক
বছরের ভালোবাসা উজাড় করে দিত।
কিন্তু
তারপরই আসত সেই কঠিন সময়টা। আবার ফেরার পালা। লিলির কান্নামাখা মুখ, মায়ের শুকনো চোখ আর রবির চিন্তিত দৃষ্টি রেখে ট্রেনে ওঠা।
প্রতিবারই মনে হতো এ যেন এক নতুন বিচ্ছেদ যন্ত্রণা। দূরে চলে গেলে আবার সেই ফোনই
ভরসা। লিলির কণ্ঠস্বরের ওঠানামা থেকেই রুবিনা বোঝার চেষ্টা করত সে কেমন আছে। স্কুল
থেকে কোনো অভিযোগ এলে অস্থির হয়ে উঠত। রবি বা মা ফোন করে লিলির শরীর খারাপের কথা জানালে
রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত।
আর্থিক
টানাপোড়েনও ছিল। খুলনায় থাকার খরচ, ঢাকায় বাড়িটার ঋণের
কিস্তি, লিলির স্কুলের খরচ, নিজের যাতায়াত খরচ - সব মিলিয়ে বেতনের প্রায় সবটাই শেষ হয়ে
যেত। জমানো টাকাও ধীরে ধীরে কমে আসছিল। রুবিনা খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করত। নিজের
জন্য হয়তো একটা নতুন শাড়িও কিনত না সহজে। তার সমস্ত চিন্তা, সমস্ত সঞ্চয় ছিল লিলিকে ঘিরে, আর ছিল বাড়িটার ঋণ শোধ করার চিন্তা।
খুলনার
স্কুলে রুবিনা মন বসাতে পারত না ঠিকমতো। শরীরটা স্কুলে থাকত, কিন্তু মনটা থাকত ঢাকায় লিলির কাছে। সহকর্মীরা জিজ্ঞেস করলে
শুধু মৃদু হাসত। নিজের ভেতরের ঝড়টা কাউকে বুঝতে দিত না। রাতে শুয়ে শুয়ে পুরনো
দিনের কথা ভাবত। আরিফ আর লিলির সাথে খুলনার সেই ছোট্ট সংসারটা। তারপর ঢাকার নতুন
বাড়ি, লিলির নতুন স্কুল। আর এখন এই
খুলনা আর ঢাকার মধ্যে দুলতে থাকা জীবনটা।
লিলিও
বড় হচ্ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মায়ের অনুপস্থিতি হয়তো সে আরও ভালোভাবে বুঝতে
পারত। ফোনে তার কথাগুলো আরও পরিপক্ক হতো। কখনো কখনো অভিমান করে বলত, "তোমার কাছে তোমার কাজই সব, তাই না মা?"
এই
কথাগুলো রুবিনার বুকে তীরের মতো বিঁধত। লিলির অভিমান ভাঙানোর জন্য সে আরও বেশি করে
সময় দেওয়ার চেষ্টা করত, আরও বেশি করে ফোন করত, সম্ভব হলে আরও ঘন ঘন যাওয়ার চেষ্টা করত।
এই
টানাপোড়েনের জীবন। একদিকে খুলনার চাকরি আর একা থাকা, অন্যদিকে ঢাকার বাড়ি, ভাই-বোন আর লিলির
ভবিষ্যৎ। সে যেন এক অদৃশ্য সুতোর টানে দুই শহরে বাঁধা পড়েছিল। না পারছে
সম্পূর্ণভাবে খুলনার জীবনটাকে আপন করে নিতে,
না
পারছে ঢাকায় গিয়ে স্থায়ী হতে। ডেপুটেশন বাতিলের পর সে চেষ্টা করেছিল বদলির জন্য।
ঢাকায় তার পূর্বের স্কুলে বদলি হওয়ার জন্য আবেদন
করেছিল। কিন্তু সরকারি চাকুরির বদলি অত সহজ নয়। বছরের পর বছর ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি।
রুবিনা
বুঝতে পারছিল, এই জীবন সংগ্রাম হয়তো সহজে
শেষ হবে না। লিলি যতদিন বড় না হচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে
না শিখছে, ততদিন হয়তো তাকে এভাবেই দুই
শহরের মধ্যে ছুটতে হবে। শরীর হয়তো ক্লান্ত হয়ে যাবে, মন হয়তো ভেঙে চুরমার হবে, কিন্তু লিলিকে ভালো
রাখার এই লড়াই তাকে চালিয়ে যেতে হবে। লিলি ভিডিও কলে হাসলে তার মুখে হাসি ফুটত, লিলির গলা বিষণ্ণ শুনলে তার চোখে জল আসত। এটাই ছিল তার
বেঁচে থাকার রসদ, তার কষ্টের কারণ, তার সবটুকু ভালোবাসা।
লিলির
মুখের দিকে তাকিয়ে সে প্রতিজ্ঞা করত। এই টানাপোড়েন একদিন ঠিকই শেষ হবে। হয়তো লিলি
বড় হয়ে তার কাছে চলে আসবে, নয়তো সে কোনোভাবে
ঢাকায় বদলি হতে পারবে। কিন্তু সেই দিনটা কবে আসবে, তা সে জানত না। তবুও আশায় বাঁচত রুবিনা। আর চলতে থাকত দুই শহরের মধ্যে তার একা
পথচলা। প্রতিবার খুলনায় ফেরার ট্রেনে বসে সে দেখত রাতের অন্ধকার। সেই অন্ধকারের
মতো তার ভবিষ্যতও অনিশ্চিত কিন্তু লিলির ভালোবাসার আলোয় সে পথ খুঁজে নিত।
টানাপোড়েনের এই সুতোয় বাঁধা জীবন নিয়েই রুবিনা এগিয়ে চলছিল, এক দৃঢ়চেতা মা হিসেবে,
এক একা
যোদ্ধা হিসেবে। এই লড়াই শুধু তার নিজের নয়,
তার
মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। আর এই লড়াইয়ে সে হার মানতে রাজি ছিল না।
সকল গল্প পড়তে ভিজিট করুন: The World of Stories
প্রযুক্তি বিষয়ক লেখা পড়তে ভিজিট করুন: Tech News BD