ডাঃ আহমেদ ফারহান। নামটা শুনলেই অনেকে প্রথমে একজন দক্ষ দন্তচিকিৎসকের ছবি আঁকতেন মনে। ঢাকার অভিজাত এলাকার পরিচিত মুখ, যাদের দাঁত নিয়ে কোনো সমস্যা হতো, নিশ্চিত থাকতে পারতেন ফারহান সাহেবের চেম্বারে গেলে সমাধান মিলবেই। কিন্তু এই পেশা শুধু তার রুটিরুজি ছিল, তার আত্মার আরাম ছিল অন্যখানে – গবেষণা।
ডাঃ
ফারহান তার বাড়ির নীচতলাটিকে
সাজিয়েছিলেন এক অসাধারণ বিজ্ঞান
গবেষণাগার হিসেবে। কাঁচের টিউব, রাসায়নিকের বোতল, জটিল ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি,
সার্কিট বোর্ড আর বিশাল মনিটর ভর্তি
ডেটা – এ যেন এক
অন্য জগৎ। বাইরের সাধারণ
মানুষজন হয়তো ভাবতেও পারতো
না, ছিমছাম এই বাড়ির নীচেই
একজন মানুষ বিজ্ঞানের গভীরে ডুব দিয়ে কাটিয়ে
দেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চেম্বারের
ব্যস্ততার পর এটাই ছিল
তার আসল আশ্রয়।
প্রথম
দিকে দন্তচিকিৎসাই ছিল মুখ্য। কিন্তু
ধীরে ধীরে গবেষণার নেশা
তাকে এমনভাবে গ্রাস করলো, যে চেম্বারে রোগী
দেখতেন নামমাত্র। বেশিরভাগ সময় কাটতো ল্যাবেই।
সহকারীদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে
নিজেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে ডুব দিলেন গবেষণার এই অতল সমুদ্রে।
তার গবেষণা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন – কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে
আটকে ছিল না তার
আগ্রহ। একের পর এক
গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হতে থাকলো। নতুন
তত্ত্ব, নতুন সূত্র, নতুন
আবিষ্কার – বিজ্ঞান মহলে তার নাম
ছড়িয়ে পড়লো দ্রুত গতিতে।
বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বব্যাপী
বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে
তিনি এক পরিচিত এবং
শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হলেন। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ আসতে
লাগলো, সম্মেলনে প্রধান বক্তা হওয়ার অনুরোধ আসতে লাগলো। ডাঃ
আহমেদ ফারহান শুধুমাত্র বাংলাদেশের গর্ব নন, তিনি
হয়ে উঠেছিলেন মানবজাতির সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রতীক।
পুরো
পৃথিবীতে তার নাম ছড়িয়ে
পড়লো। কিন্তু খ্যাতির এই চূড়ায় উঠে
হঠাৎই একদিন তিনি নিখোঁজ হয়ে
গেলেন। আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত এক অদৃশ্য হয়ে
যাওয়া।
একদিন
সকালে তার প্রধান সহকারী,
করিম সাহেব, চেম্বার খোলার জন্য এসে দেখেন
ডাঃ ফারহান এখনো আসেননি। এটা
অস্বাভাবিক। যদিও আজকাল তিনি
নিয়মিত চেম্বারে বসতেন না, তবু আসার
সময় হলে তিনি চলে
আসতেন অথবা ফোন করে
খবর দিতেন। করিম সাহেব বারবার
ফোন করলেন, কিন্তু ফোন বন্ধ। বাড়িতে
ফোন করলেন, ওখান থেকেও কোনো
সাড়া নেই। দারোয়ান জানালো,
সাহেব কাল রাতে ল্যাবে
কাজ করছিলেন, কিন্তু কখন বেরিয়েছেন বা
বেরিয়েছিলেন কিনা সে খেয়াল
করেনি। ল্যাবের দরজা ভেতর থেকে
বন্ধ ছিল।
বিষয়টি
গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দারোয়ান ও
পাশের বাড়ির একজনের সাহায্যে দরজা ভেঙে ল্যাবে
ঢোকা হলো। ভেতরের দৃশ্য
অদ্ভুত। সবকিছু পরিপাটি করে রাখা, যন্ত্রপাতি
গুছানো, যেন কেবল কাজ
শেষ করেই উঠে গেছেন।
টেবিলের ওপর খোলা খাতা,
তাতে শেষ মুহূর্তে কিছু
লেখা। গরম চায়ের কাপ
পড়ে আছে একদিকে। কিন্তু
ডাঃ ফারহান নেই। ঘরের কোথাও
নেই। জানালা ভেতর থেকে বন্ধ,
কোনো ভাঙচুরের চিহ্ন নেই, সবকিছু স্বাভাবিক।
কেবল চেয়ারটা টেবিলের দিকে ঘোরানো, দেখে
মনে হচ্ছে কাজ করতে করতেই
তিনি উঠে গেছেন। কিন্তু
কোথায় গেছেন? বাড়ির ভেতরে কোথাও নেই, বাইরেও বের
হননি বলে দারোয়ান নিশ্চিত।
খবরটা
ছড়িয়ে পড়লো দ্রুত। পরিচিত
জন, পুলিশ, সংবাদমাধ্যম – সবাই আগ্রহী হয়ে
উঠলো। একজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী
এভাবে হাওয়া হয়ে যেতে পারেন
না!
প্রথম
ক'দিন সবাই ভাবলো
হয়তো কোনো ব্যক্তিগত কাজে
গেছেন, বা হয়তো হঠাৎ
কোনো গোপন গবেষণায় মন
দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। কিন্তু
দু'দিন, তিনদিন করে
যখন এক সপ্তাহ পার
হয়ে গেল, তখন সবার
মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট হলো।
পুলিশের তদন্ত শুরু হলো। ইন্সপেক্টর
রহমান, চৌকস ও বিচক্ষণ
কর্মকর্তা, এই কেসের দায়িত্ব
নিলেন।
প্রথমেই
বাড়ির ভেতর ও বাইরের
নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হলো। ডাঃ
ফারহানের বাড়িতে উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা লাগানো
ছিল, কিন্তু গত রাতের ফুটেজগুলো
ছিল অস্পষ্ট অথবা সম্পূর্ণভাবে মুছে
দেওয়া। এটা কোনো সাধারণ
অপরাধীর কাজ নয়, এটা
স্পষ্ট। ল্যাবের ভেতরে কোনো জোরজবরদস্তির আলামত
না পেয়ে প্রথমদিকে পুলিশ
বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো – তিনি
স্বেচ্ছায় কোথাও গেছেন, নাকি তাকে তুলে
নেওয়া হয়েছে?
ইন্সপেক্টর
রহমান ডাঃ ফারহানের অতীত
এবং সাম্প্রতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে লাগলেন। তার
কোনো ব্যক্তিগত শত্রু ছিল? আর্থিক সমস্যা
ছিল? কোনো গোপন সম্পর্ক?
সব খোঁজ নিয়ে দেখা
গেল, ব্যক্তিগত জীবন ছিল অতি
সাধারণ, প্রায় সন্ন্যাসীর মতো। গবেষণাই ছিল
তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল
ছিলেন, কোনো ঋণের বা
দেনার খবর নেই। সুতরাং
ব্যক্তিগত কারণে নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হতে শুরু করলো।
অন্যদিকে
তার গবেষণার দিকটি খতিয়ে দেখা হলো। ডাঃ
ফারহান ঠিক কী নিয়ে
কাজ করছিলেন শেষ সময়ে? এটাই
হয়ে উঠলো রহস্যের মূল
কেন্দ্রবিন্দু। তার ল্যাবের খাতাপত্র,
কম্পিউটারের ফাইলগুলো পরীক্ষা করা হতে লাগলো।
কিন্তু সমস্যা হলো, তার বেশিরভাগ
গবেষণার নোট ছিল সাংকেতিক
ভাষায় লেখা, অনেক ফাইল ছিল
অত্যন্ত জটিল এনক্রিপশনে সুরক্ষিত।
সাধারণ পুলিশ বা টেকনিশিয়ানদের পক্ষে
সেগুলো ভেদ করা প্রায়
অসম্ভব।
করিম
সাহেব, যিনি দীর্ঘদিন তার
সঙ্গে ছিলেন, কিছু সূত্র দিতে
পারলেন। গত কয়েক মাসে
ডাঃ ফারহানকে অস্বাভাবিকভাবে চিন্তিত দেখেছে করিম। ল্যাবে কাজ করার সময়
তিনি আগের চেয়ে অনেক
বেশি সতর্ক থাকতেন। অপরিচিত লোকজনের ফোন আসত, যাদের
সাথে কথা বলার সময়
তার কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে যেত।
একবার তো তিনি ল্যাবের
দরজায় অতিরিক্ত একটি ধাতব লক
লাগানোর কথাও বলেছিলেন, যদিও
পরে তা আর করেননি।
করিম
সাহেব আরো জানান, শেষ
কয়েক মাস ধরে ডাঃ
ফারহান এমন কিছু নিয়ে
কাজ করছিলেন যাকে তিনি 'মানবজাতির
জন্য আশীর্বাদ' এবং একই সাথে
'এক সীমাহীন বিপজ্জনক শক্তি' বলে অভিহিত করতেন।
তিনি এর বেশি কিছু
বলেননি। তবে তার ল্যাবে
কিছু নতুন, অচেনা রাসায়নিক ও ধাতব উপাদান
দেখতে পাওয়া গেছে।
ইন্সপেক্টর
রহমান বুঝতে পারলেন, রহস্য এই গবেষণার মধ্যেই
লুকিয়ে আছে। ডাঃ ফারহান
এমন কিছু আবিষ্কার করে
ফেলেছিলেন, যা হয়তো কোনো
শক্তিশালী গোষ্ঠী বা সংস্থার স্বার্থের
পরিপন্থী অথবা যা তারা
নিজেদের দখলে নিতে চেয়েছিল।
বিভিন্ন
দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, বড় বড় কর্পোরেশন,
এমনকি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দিকে সন্দেহের তীর
ঘুরতে লাগলো। ডাঃ ফারহানের গবেষণা
যদি সত্যিই যুগান্তকারী কিছু হয়, যেমন
– কোনো নতুন শক্তির উৎস
যা প্রচলিত জ্বালানি ব্যবস্থাকে অচল করে দেবে,
বা কোনো নতুন সামরিক
প্রযুক্তি, বা এমন কোনো
জৈবিক আবিষ্কার যা মানব শরীরকে
নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে – তাহলে
এর মূল্য সীমাহীন। এই আবিষ্কারের নিয়ন্ত্রণ
যার হাতে যাবে, সেই
হবে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর সত্তা।
তদন্ত
যত এগোতে লাগলো, ততই জালটা জটিল
হতে লাগলো। ডাঃ ফারহানের কম্পিউটারের
কিছু পুনরুদ্ধারকৃত ফাইল থেকে দেখা
গেল, বিভিন্ন সময়ে একাধিক বেনামী
ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে তাকে মোটা
অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তার গবেষণা বিক্রি
করার জন্য। তিনি সবই প্রত্যাখ্যান
করেছেন। কিছু ইমেইলে zaagdhddg হুমকিও
ছিল, কিন্তু তিনি হয়তো এগুলো
গুরুত্ব দেননি।
ইন্সপেক্টর
রহমান আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপন করলেন। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কিছু তথ্য দিয়ে
সাহায্য করলো, কিন্তু সেগুলো ছিল অস্পষ্ট। মনে
হচ্ছিল, সবাই যেন কিছু
আড়াল করতে চাইছে অথবা
নিজেরাই অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে।
এক
মাস পেরিয়ে গেল দেখতে দেখতে।
ডাঃ ফারহানের কোনো খোঁজ নেই।
মিডিয়া এবং জনগণের চাপ
বেড়েই চলেছে। পুলিশ সব সম্ভাব্য দিক
খতিয়ে দেখছে – নদী, বন, পরিত্যক্ত
এলাকা – কিন্তু কোনো সূত্র মিলছে
না। মনে হচ্ছে যেন
তিনি বাতাসে মিলিয়ে গেছেন।
একদিন
ল্যাবের একটি অপ্রচলিত কোণে
করিম সাহেব একটি ছোট, ধাতব
সিলিন্ডার খুঁজে পেলেন। এটি অন্যান্য যন্ত্রপাতির
মতো নয়, অদ্ভুত মসৃণ
এবং শীতল। সিলিন্ডারের গায়ে আলো ফেললে
একটি সূক্ষ্ম নকশা ফুটে ওঠে।
করিম সাহেবের মনে হলো, এই
নকশাটা যেন তার পরিচিত।
অনেক ভেবে তিনি মনে
করতে পারলেন, এই নকশাটি ডাঃ
ফারহানের একটি ব্যক্তিগত লকেট
বা চাবির রিং-এ খোদাই
করা ছিল।
তিনি
সিলিন্ডারটি ইন্সপেক্টর রহমানের কাছে নিয়ে গেলেন।
পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষা করে দেখল, এটি
কোনো সাধারণ ধাতু নয়, বরং
অজানা এক সংকর ধাতু
(alloy), যা পৃথিবীর কোথাও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায় না। এবং
এর ভেতরে অত্যন্ত শক্তিশালী, ঘনীভূত শক্তি ধারণের অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। এটা কি ডাঃ
ফারহানের সেই 'সীমাাহীন বিপজ্জনক
শক্তি'?
সিলিন্ডারের
গায়ে খোদাই করা নকশাটি ছিল
প্রকৃতপক্ষে একটি অত্যন্ত জটিল
QR কোড। ডাঃ ফারহান সবসময়েই
জটিল কোড তৈরি করতে
ভালোবাসতেন। এই কোড স্ক্যান
করার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার
দরকার ছিল, যা ডাঃ
ফারহানের কম্পিউটারেই পাওয়া গেল। পুলিশ ও
সাইবার বিশেষজ্ঞরা মিলে বহু কষ্টে
কোডটি স্ক্যান করতে সক্ষম হলো।
কোডটি
থেকে পাওয়া গেল একটি এনক্রিপটেড
ফাইল পাথ এবং একটি
দীর্ঘ পাসওয়ার্ড। এই ফাইলটি ডাঃ
ফারহানের কম্পিউটারের একটি লুকানো ড্রাইভে
ছিল। ফাইলটি খোলার পর ভেতর থেকে
যা বের হলো, তা
ছিল বিস্ময়কর এবং ভয়ঙ্কর।
এটি
ছিল ডাঃ ফারহানের শেষ
গবেষণা রিপোর্ট এবং কিছু গোপন
যোগাযোগ। তিনি যা আবিষ্কার
করেছিলেন, তা ছিল একটি
ক্ষুদ্র, পোর্টেবল এনার্জি সেল – নাম দিয়েছিলেন 'কোয়ান্টাম
ল্যাটিস এনার্জি সেল' (Quantum Lattice Energy
Cell - QLEC)। এই সেল প্রচলিত
সকল শক্তি উৎসের চেয়ে হাজার গুণ
বেশি কার্যকর এবং নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব
এবং উৎপাদন খরচ অত্যন্ত কম।
একটি ছোট্ট QLEC সেল একটি পুরো
শহরকে বছরের পর বছর ধরে
শক্তি সরবরাহ করতে পারত।
কিন্তু
ভয়ঙ্কর কথা ছিল অন্য
জায়গায়। এই ফাইলের সাথে
কিছু ইমেইল এবং এনক্রিপটেড চ্যাটের
রেকর্ড ছিল। সেখানে দেখা
গেল, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক
সংস্থা এবং কিছু সরকার
এই আবিষ্কারের ব্যাপারে জানতে পেরেছিল। তার মধ্যে সবচেয়ে
সক্রিয় ছিল একটি ছায়া
সংস্থা যার নাম 'জেনেসিস'। এই সংস্থাটি
গোপনে বিভিন্ন দেশের সামরিক প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আন্তর্জাতিক
বাজারে প্রভাব বিস্তার করে। তাদের সাথে
কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীরও পরোক্ষ যোগ ছিল, যাদেরকে
তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করত।
জেনেসিস
ডাঃ ফারহানকে তাদের সাথে যোগ দিয়ে
QLEC প্রযুক্তি তাদের হাতে তুলে দিতে
বলেছিল। বিনিময়ে তাকে অফার করা
হয়েছিল অকল্পনীয় অর্থ, সম্পদ এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু ডাঃ ফারহান আদর্শবাদী
ছিলেন। তিনি এই ভয়াবহ
শক্তি কারো ব্যক্তিগত বা
গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে
চাননি। তিনি চেয়েছিলেন এই
প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দিতে, যাতে
পুরো মানবজাতি উপকৃত হয়।
তার
এই প্রত্যাখ্যানই কাল হলো। জেনেসিস
বুঝতে পেরেছিল, ডাঃ ফারহানকে বাগে
আনা যাবে না। শেষ
মূহুর্তের যোগাযোগগুলো ছিল স্পষ্ট হুমকি।
তারা জানিয়েছিল, যদি তিনি তাদের
কথা না শোনেন, তাহলে
তাকে চরম মূল্য দিতে
হবে।
শেষ
চ্যাট মেসেজটি ছিল ডাঃ ফারহানের।
তিনি লিখেছিলেন, "আমি জানি তোমরা
এসে গেছো। দরজা ভাঙতে হবে
না। আমি নিজে খুলছি।
কিন্তু জেনে রেখো, আমার
গবেষণা নষ্ট হবে না।
সত্য আলো দেখবেই। মানবজাতি
এই আশীর্বাদ পাবেই, তোমাদের মতো শয়তানদের হাতে
পড়বে না।"
এই
মেসেজটি দেখে সব পরিষ্কার
হয়ে গেল। ডাঃ ফারহান
জানতেন তারা আসছে। তিনি
ল্যাবের সবকিছু গুছিয়ে রেখেছিলেন, যেন দেখে মনে
হয় স্বাভাবিক কাজ শেষ হয়েছে।
হয়তো তিনি ভেবেছিলেন দরজার
লকের চেয়ে কোড করা
মেসেজটি বেশি নিরাপদ থাকবে।
তিনি স্বেচ্ছায় দরজা খুলে দিয়েছিলেন
কারণ তিনি জানতেন প্রতিরোধ
করে লাভ নেই। তিনি
চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মুখোমুখি হতে, হয়তো বোঝাতে
চেষ্টা করতে। কিন্তু জেনেসিসের মতো সংগঠনের জন্য
সমঝোতা অপ্রয়োজনীয়। তারা তাকে তুলে
নিয়ে গেছে।
কিন্তু
কোথায়? ফাইলের শেষে একটি ছোট্ট
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ লেখা
ছিল, এবং তার নিচে
লেখা ছিল 'Project Nightingale'। এটা কি
তার গন্তব্য? নাকি তার গবেষণার
গোপন কোনো অংশের নাম?
ইন্সপেক্টর
রহমান বুঝতে পারলেন, এই কেস তার
এখতিয়ারের বাইরে চলে গেছে। এটি
এখন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং ক্ষমতার লড়াইয়ের
অংশ। তিনি দ্রুত ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে সব জানালেন।
ডাঃ
আহমেদ ফারহানকে খুঁজে পাওয়া গেল না। তিনি
কি এখনও বেঁচে আছেন,
জেনেসিসের গোপন কোনো কেন্দ্রে
বন্দি হয়ে আছেন তার
আবিষ্কারের জিম্মি হিসেবে? নাকি তাকে পৃথিবী
থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে তার আবিষ্কার
জনসমক্ষে না আসে? এই
প্রশ্নের উত্তর অমীমাংসিত রয়ে গেল।
তবে
একটি জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেল – ডাঃ
ফারহান স্বেচ্ছায় যাননি, তাকে কিডন্যাপ করা
হয়েছে। এবং এর পিছনে
ছিল তার যুগান্তকারী আবিষ্কার
- QLEC। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী
নয়, বরং আরও বড়,
আরও সংগঠিত এবং আরও ভয়ঙ্কর
এক সংস্থা, যারা পৃথিবীর ক্ষমতাকে
নিজেদের কুক্ষিগত করতে চায়, তারাই
তুলে নিয়ে গেছে আমাদের
প্রিয় বিজ্ঞানীকে।
ডাঃ
ফারহানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার রহস্য
উন্মোচিত হলো ঠিকই, কিন্তু
তা জন্ম দিল আরও
বড় এক আশঙ্কার – QLEC এর
মতো শক্তি এখন ভুল হাতে।
আর মানবজাতির জন্য যে আশীর্বাদ
তিনি চেয়েছিলেন, তা এখন পরিণত
হয়েছে এক ভয়ঙ্কর অভিশাপের
সম্ভাবনায়। ডাঃ ফারহানের ল্যাবের
সেই ছোট্ট সিলিন্ডারটি এখন সরকারের জিম্মায়,
তার রেখে যাওয়া ফাইলগুলো
এখন আন্তর্জাতিক গবেষণার বিষয়। আর বিশ্ব অপেক্ষায়
আছে, কবে Project Nightingale এর রহস্য ভেদ
হবে, কবে জানা যাবে
বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী ডাঃ আহমেদ ফারহানের
ভাগ্যে কী ঘটেছে। হয়তো
কোনোদিন জানা যাবে না।
বিজ্ঞানের একনিষ্ঠ সেবক বিজ্ঞানের জন্যই
হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের অতল গহীনে।
এ রকম আরো গল্প পড়তে ভিজিট করুন: The World of Stories