হারানো স্বপ্ন, নতুন পথ: এক হিসাব সহকারীর টিকে থাকার আখ্যান
হারানোস্বপ্ন, নতুন পথ: এক হিসাব সহকারীর টিকে থাকার আখ্যান
২০২৫
সাল। বাংলাদেশের বাতাস থমথমে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরমে। প্রধান দুই দলের মধ্যে
বিরোধ এতটাই তিক্ত যে, সাধারণ মানুষের
জীবন এক অদৃশ্য সুতোর
ওপর ঝুলছে। এই অস্থিরতার মধ্যেই
আরেকটা ঢেউ উঠলো – সরকারি
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। ১৭টা বছর বেতন
বাড়েনি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। এই
অবস্থায় টিকে থাকা অসম্ভব।
নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুবেলা খাবার
তুলে দেওয়ার জন্য, উন্নত জীবন তো দূরের
কথা, ন্যূনতম বাঁচবার তাগিদে তারা রাস্তায় নেমেছে।
বেতন ও ভাতা বৃদ্ধির
দাবি, পেনশন সংক্রান্ত কিছু জটিলতা নিরসন,
পদোন্নতির স্বচ্ছ নীতিমালা – এই সব দাবিতে
আন্দোলন ক্রমশ জোরাদার হচ্ছে।
আরিফ,
একজন হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর।
পোষ্টিং ঢাকার বাইরে, এক মফস্বল শহরের
উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। নামেই সরকারি চাকরি, বাস্তবে সামান্য বেতন। এই বাজারে পাঁচজনের
সংসার চালানো এক প্রকার দুঃস্বপ্ন।
স্ত্রী ফাতেমা, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে করিম, এবং
পঞ্চম শ্রেণির ছোট মেয়ে লিমাকে
নিয়ে তার ছোট্ট সংসার।
এর সাথে যোগ হয়েছে
গ্রামের বাড়ি থেকে এসে
থাকা বিধবা মা। সরকারি চাকরি,
কিন্তু তার বেতন দিয়ে
মাসের মাঝামাঝি থেকেই টানাপোড়েন শুরু হয়। মায়ের
ঔষধ, ছেলেমেয়ের স্কুলের খরচ, বাজার খরচ,
বাড়ি ভাড়া – সব মিলিয়ে হিমশিম
খেতে হয় আরিফকে। ধারদেনা
তার নিত্যসঙ্গী। ১৭ বছর ধরে
একই বেতন! মূল্যস্ফীতির কাছে তার বেতন
বহু আগেই হার মেনেছে।
আন্দোলনে
যোগ দেওয়াটা তার জন্য শুধু
দাবির ব্যাপার ছিল না, ছিল
টিকে থাকার শেষ চেষ্টা। যদি
বেতন একটুও বাড়ে, হয়তো জীবনটা একটু
সহজ হবে। সহকর্মীদের সাথে
আলোচনা হতো প্রতিদিন। হতাশা,
ক্ষোভ আর এক নতুন
আশার আলোয় তাদের চোখ
জ্বলতো। সবাই মিলে যদি
চাপ সৃষ্টি করা যায়, হয়তো
সরকার নড়েচড়ে বসবে। এই ভেবেই আরিফ
আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়। মিটিংয়ে যায়,
স্লোগান দেয়, সহকর্মীদের উৎসাহিত
করে। তার শান্ত স্বভাবের
আড়ালে জমে থাকা ক্ষোভটা
যেন এই আন্দোলনে প্রকাশের
পথ খুঁজে পায়।
সেদিন
ছিল আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সারাদেশের
উপজেলা পর্যায়ের কর্মচারীরাও অফিসে কর্মবিরতি পালন করে বিক্ষোভ
করছিল। আরিফও উপস্থিত ছিল। প্রখর রোদে
দাঁড়িয়ে সহকর্মীদের সাথে সেও গলা
মেলাচ্ছিল। "বেতন বৃদ্ধি আমাদের
অধিকার!", "১৭ বছরের বঞ্চনা
মানি না!", "দুর্নীতি নয়, আমাদের ন্যায্য
পাওনা চাই!" স্লোগানগুলো যেন বুক চিরে
বের হচ্ছিল। মনে এক অদ্ভুত
শক্তি পাচ্ছিল। এই কঠিন সময়ে
সে একা নয়, হাজারো
সহকর্মীর সাথে আছে।
বিক্ষোভ
শেষে অফিস চত্বরেই কিছুটা
জটলা চলছিল। আগামী কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।
হঠাৎ অফিস সুপার মুরাদ
সাহেব এসে আরিফকে ডাকলেন।
আরিফ কিছু বোঝার আগেই
মুরাদ সাহেবের মুখ দেখে তার
কেমন যেন লাগছিল। শুকনো
মুখে মুরাদ সাহেব তাকে নিজের রুমে
নিয়ে গেলেন।
"আরিফ, একটা
খারাপ খবর আছে," মুরাদ
সাহেব নিচু গলায় বললেন।
তার চেহারায় সহানুভূতির ছাপ, কিন্তু চোখে
স্পষ্ট ভয়। আরিফ বুকে
ধুকপুকানি অনুভব করলো। "কেমন খবর স্যার?"
"তোমার একটা চিঠি এসেছে,"
মুরাদ সাহেব একটা খাম এগিয়ে
দিলেন। সরকারি খাম, উপরে লেখা
– বরখাস্ত আদেশ। আরিফের হাত কাঁপতে লাগলো।
খামটা খুলতেই ভেতরের লেখাগুলো তার চোখে ঝাপসা
হয়ে গেল। "শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ..."
শব্দগুলো তার মাথায় হাতুড়ির
মতো আঘাত হানল। বরখাস্ত!
তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে! আন্দোলনের
জন্য!
মুরাদ
সাহেব বললেন, "উপরে থেকে চাপ
ছিল। কিছু তালিকা এসেছে।
দুর্ভাগ্যবশত তোমার নামটা ছিল..." তিনি আর কিছু
বলতে পারলেন না। আরিফের মনে
হলো পৃথিবীটা তার পায়ের নিচ
থেকে সরে গেছে। পাঁচজনের
সংসার, সামান্য বেতন তবুও একটা
আশ্রয় ছিল। এখন সেটাও
নেই। মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেল। কীভাবে
সম্ভব? সে তো শুধু
তার ন্যায্য দাবির জন্য দাঁড়িয়েছিল। এটা
কি অন্যায়?
ঘর
পর্যন্ত পৌঁছাতে আরিফের পা চলছিল না।
শরীরের সব শক্তি যেন
ফুরিয়ে গেছে। ফাতেমা দরজার কাছেই ছিল। আরিফের চেহারা
দেখেই সে বুঝতে পারল
কিছু একটা হয়েছে। "কী
হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?"
ফাতেমা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো।
আরিফ কোনোমতে অফিসের ঘটনাটা ফাতেমাকে খুলে বলল। বরখাস্তের
চিঠিটা ফাতেমার হাতে দিতেই তার
চোখ কপালে উঠল। চিঠিটা পড়তে
পড়তে ফাতেমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে
গেল। শরীরটা এলিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল। "তার
মানে... তার মানে তোমার
চাকরি নেই?" ফাতেমার গলা কাঁপছিল। আরিফ
মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, নেই।
সেই
রাতটা ছিল এক অনন্ত
বিভীষিকার রাত। ফাতেমা কাঁদছিল।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। ছেলেমেয়ে দুটো পাশে শুয়ে।
তাদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আরিফের
বুক ফেটে যাচ্ছিল। এই
ছোট ছোট মুখগুলোকে সে
কী খাওয়াবে? কীভাবে স্কুলে পাঠাবে? মায়ের ঔষধের কী হবে? ঋণের
কিস্তি কীভাবে শোধ করবে?
হতাশার
ঘোর যেন কাটে না।
সকালে উঠে অফিসে গেল।
সহকর্মীরা অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিল।
কেউ কেউ আড়ালে সমবেদনা
জানাল, কিন্তু সরাসরি কথা বলতে বা
সাহায্য করতে কেউ সাহস
পেল না। চারদিকে ভয়।
কে জানে কার নাম
পরের তালিকায় আছে। ইউনিয়ন নেতারাও
নিজেদের বাঁচাতে ব্যস্ত। যারা একটু পরিচিত
ছিল, তারাও ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গেল। আরিফ একা
হয়ে গেল। সম্পূর্ণ একা।
চাকরি
বাঁচানোর লড়াইটা এরপর থেকে তার
শুরু হলো। প্রথমে গেল
ইউনিয়নের স্থানীয় নেতার কাছে। তিনি ঢাকায় যোগাযোগ
করতে বললেন, কিন্তু নিজেও যে খুব কিছু
করতে পারবেন না সেটাও বুঝিয়ে
দিলেন। ঢাকার নেতারা নাকি আরও বড়
চাপে আছেন। এরপর গেল জেলা
সদরের অফিসে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপের চেষ্টা
করল। কিন্তু একজন বরখাস্ত হওয়া
কর্মচারীর সাথে কথা বলার
সময়ই যেন কারো নেই।
গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাহারাদার তাড়িয়ে দিল। কেউ কেউ
পরামর্শ দিল উকিল ধরার।
মামলা করার। কিন্তু মামলা চালানোর টাকা কই তার?
ধারদেনা করে যে সামান্য
কিছু টাকা জোগাড় করেছিল,
সেটা দিয়ে কয়েকদিন সংসার
চলল। এরপর আবার অন্ধকার।
সংসার
চালাতে গিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে
অসহায়ত্ব গ্রাস করতে লাগল। হাত
খরচের টাকা নেই। ছেলেমেয়েরা
এটা-ওটা আবদার করে,
আরিফ মুখ নিচু করে
থাকে। ফাতেমা ঘরের হাঁড়ি-পাতিল
বিক্রি করতে শুরু করল।
প্রথমে জমানো কিছু গয়না, এরপর
ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। প্রতিবার কিছু বিক্রি করার
সময় ফাতেমার চোখে জল আসত।
"এগুলো তো সন্তানদের জন্য
রেখেছিলাম," ফাতেমা বলত। আরিফ নির্বাক
চেয়ে থাকত।
মাথা
গোঁজার ঠাঁইটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। তিন
মাসের বাড়ি ভাড়া জমে
গেছে। বাড়িওয়ালা কড়া কথা শুনিয়ে
গেছে। যেকোনো দিন পরিবার নিয়ে
রাস্তায় দাঁড়াতে হতে পারে। এই
চিন্তাটা আরিফকে রাতে ঘুমাতে দিত
না।
বন্ধুবান্ধব,
আত্মীয়স্বজন প্রথমদিকে কিছুটা সাহায্য করেছিল। কিন্তু ধার চাইতে চাইতে
আরিফের নিজেরই লজ্জা লাগতে শুরু করল। যাদের
কাছে গেল, অনেকেই মুখ
ঘুরিয়ে নিল। মানুষের ব্যবহার
বদলে গেল। যে আরিফকে
আগে সবাই সম্মান করত,
এখন তাকে দেখলে এড়িয়ে
চলে। যেন সে কোনো
সংক্রামক ব্যাধি।
চাকরি
ফিরে পাওয়ার চেষ্টা সে ছাড়ল না।
ঢাকার পরিচিত এক বড় নেতার
বাড়িতে দিনের পর দিন ধর্না
দিল। গেটের দারোয়ান ঢুকতে দেয় না। বারবার
ফোন করে, ধরেন না।
অনেক কষ্টের পর একদিন দেখা
পেল। সব খুলে বলল।
নেতা সহানুভূতি দেখালেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো
না। "চেষ্টা করব," এই আশ্বাসটুকু ছাড়া
আর কিছুই পেল না। সে
বুঝল, এই আশ্বাস মূল্যহীন।
হতাশা
আরিফকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।
সে কি ভুল করেছিল?
নিজের ন্যায্য অধিকার চাওয়ার আন্দোলন কি অপরাধ? মনের
ভেতর প্রশ্নগুলো ঘুরছে। রাগে, দুঃখে দাঁতে দাঁত চাপত। কিন্তু
এই রাগ দেখানোর উপায়
নেই। পরিবারকে বাঁচাতে হবে।
একদিন
ফাতেমা শুকনো মুখে বলল, "ছেলেটা
স্কুলে যেতে চায় না।
বন্ধুরা নাকি তাকে নিয়ে
হাসে। বলে ওর বাবার
চাকরি নেই।" কথাটা আরিফের বুকে গিয়ে বিঁধল।
তার ভুলের শাস্তি তার সন্তানরা পাচ্ছে।
নিজের ওপর ঘৃণা হলো।
চাকরির
চেষ্টা যখন প্রায় বন্ধ
হয়ে গেছে, তখন অন্য কিছু
করার কথা ভাবতে শুরু
করল। কিন্তু করবেটা কী? সারা জীবন
তো সরকারি অফিসের হিসাব আর কম্পিউটারের মধ্যেই
কেটে গেল। বাইরের জগতের
কঠিন বাস্তবতার সাথে তার পরিচয়
ছিল না। কারো কাছ থেকে টাকা
ধার নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা
শুরু করবে? টাকা নেই। কোনো
দোকানে কর্মচারী হবে? এই বয়সে
কাজ পাওয়া কঠিন, আর যা বেতন
দেবে তাতে সংসার চলবে
না। গ্রামে ফিরে যাবে? সেখানেও
কাজ নেই। বসতভিটে ছাড়া
তাদের তেমন জমিও নেই।
একদিন
পুরনো এক সহকর্মী, যে
একটু ভালো অবস্থানে আছে,
তাকে ডেকে পাঠাল। দেখা
করতে গেল আরিফ। সহকর্মীটি
খুব ভয়ে ভয়ে কথা
বলল। বলল যে সরকারি
চাকরিতে ফেরা এখন প্রায়
অসম্ভব। এই কালো তালিকা
সহজে ওঠে না। তার
চেয়ে বরং সে আরিফকে
একটা বেসরকারি কোম্পানির হিসাব বিভাগে একটা ছোট পদের
কথা বলতে পারে। বেতন
বাজারের তুলনায় কম, চাকরির নিরাপত্তা
নেই বললেই চলে, কিন্তু একদম
বেকার থাকার চেয়ে ভালো।
আরিফ
দ্বিধায় পড়ে গেল। সরকারি
চাকরির স্বপ্ন, সেই সম্মান, সেই
নিশ্চয়তা সব ছেড়ে একটা
অনিশ্চিত বেসরকারি চাকরি? কিন্তু আর উপায় কী?
কয়েকদিন ধরে অনেক ভাবল।
ফাতেমার সাথে কথা বলল।
ফাতেমা বলল, "আর অপেক্ষা করে
লাভ নেই। যা পাও,
সেটাই ধরো। অন্তত দুবেলা
খেতে তো পারবা।"
মনকে
শক্ত করে আরিফ সেই
বেসরকারি অফিসের ইন্টারভিউ দিল। তার অভিজ্ঞতা
ছিল, কিন্তু বয়স আর সরকারি
চাকরির মানসিকতার জন্য হয়তো শুরুতে
কিছুটা সমস্যা হলো। তবুও চাকরিটা
তার হলো। বেতন আগের
সরকারি বেতনের চেয়ে সামান্য বেশি,
কিন্তু কাজের চাপ বেশি, ছুটিছাটা
কম এবং সবচেয়ে বড়
কথা, যেকোনো সময় চাকরি চলে
যাওয়ার ভয়।
নতুন
চাকরিটা সহজ ছিল না।
প্রথম কয়েক মাস খুব
কষ্টে গেল। পুরনো সম্মান
নেই, সহকর্মীরা অচেনা, কাজের ধরন ভিন্ন। কিন্তু
আরিফ দাঁতে দাঁত চেপে কাজ
করে গেল। তার মনে
একটাই লক্ষ্য – পরিবারকে বাঁচানো। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে
দেওয়া।
চাকরিটা
ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে সে হয়তো হেরে
গেছে। যে সম্মান এবং
নিরাপত্তা চেয়ে সে আন্দোলনে
গিয়েছিল, সেটাই তার জীবন থেকে
কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জীবন থেমে থাকেনি।
বরখাস্তের কালো ছায়া তার
জীবনকে গ্রাস করতে চেয়েছিল, কিন্তু
সে হার মানেনি। হতাশার
গভীর খাদ থেকে সে
কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়েছে।
বছর
ঘুরে যায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি
কিছুটা শান্ত হয়, আবার উত্তপ্ত
হয়। সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের কী হলো, সে
খবর আরিফ আর রাখে
না। তার জগৎটা এখন
অন্যরকম। সরকারি চাকুরীর অভিজ্ঞতা এবং তার সততা, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমে ফলে দেড়
বছরের মধ্যেই সে এখন কোম্পানির হিসাব বিভাগের প্রধান। কোম্পানি থেকে তাকে একটি ফ্ল্যাট
দিয়েছে। কোম্পানির গাড়ি দিয়েই অফিসে যাতায়াত করে। পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। তারপরও
সে সবসময় একটা শূন্যতা বোধ করে।
আরিফের
বুক পকেটে এখনো পুরনো বরখাস্তের
চিঠিটা ভাঁজ করে রাখা
আছে। ওটা তার একটা
তিক্ত স্মৃতি, একটা কঠিন শিক্ষা।
সরকারি চাকরিতে ফিরে যাওয়ার স্বপ্নটা
এখন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে আর এখন সে যেতেও চায় না। কিন্তু সেই জীবন তাকে শিখিয়েছে কীভাবে
লড়াই করে টিকে থাকতে
হয়। বরখাস্তের ফাইলটা হয়তো বন্ধ হয়ে
গেছে সরকারের খাতায়, কিন্তু আরিফের জীবনের খাতায় সেই লড়াইয়ের গল্পটা
এখনো লেখা চলছে। এক
হিসাব সহকারীর হার না মানা
টিকে থাকার গল্প।