ধূসর দেয়ালের ওপার

 ধূসর দেয়ালের ওপার

ধূসর দেয়ালের ওপার

২১২ নম্বর ফ্ল্যাটের কংক্রিটের দেয়ালগুলো আরমানের পরিবারের কাছে এক অদেখা শিকলের মতো। দেয়ালের ওপার থেকে ভেসে আসে পাশের ফ্ল্যাটের খিটমিটে ঝগড়ার শব্দ, ওপরতলার বাচ্চার অবিরাম কান্না আর নিচতলার বুড়ো ভদ্রলোকের কাশির আওয়াজ। শব্দগুলো দিনের পর দিন শুনে শুনে এত চেনা হয়ে গেছে, মনে হয় পরিবারেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই চেনা শব্দের ভিড়েও আরমান, তাঁর স্ত্রী শীলা আর একমাত্র কিশোর ছেলে রোহান নিজেদের একবিন্দুতে গুটিয়ে নিয়েছে। আধুনিক একক পরিবারের এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় বাস্তবতাভিড়ের মধ্যে থেকেও একা থাকা।

আরমান একটি সরকারি অফিসের কেরানি। হাতে পায়ে ধরে, সামান্য কিছু টাকাপয়সা খরচ করে এই চাকরিটা পেয়েছিলেন বছর দশেক আগে। ভেবেছিলেন, এবার হয়তো জীবনটা থিতু হবে। কিন্তু স্বল্প আয় আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশচুম্বী দাম তাঁর সেই আশায় বারবার জল ঢেলেছে। মাসের পনেরো তারিখ না পেরোতেই হিসেবের খাতা মেলাতে হিমশিম খান শীলা। চাল, ডাল, তেল, নুন থেকে শুরু করে রোহানের স্কুলের খরচ, ইলেকট্রিক বিল, গ্যাস বিল, বাড়িভাড়াসব মিলিয়ে হিসেবটা কেবলই শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে।

সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত আরমানের মাথার ভেতর কেবলই টাকার হিসেব ঘুরতে থাকে। অফিসেও শান্তি নেই। সেখানে চলে অন্যরকম খেলা। কাজের চেয়ে মূখ্য হয়ে ওঠে রাজনৈতিক আনুগত্য। আর্মান বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের। কারো পক্ষ নিতে পারেন না। আর এটাই তাঁর জন্য কাল হয়েছে। নতুন যে বড় সাহেব এসেছেন, তিনি তাঁর নিজস্ব বলয় তৈরি করছেন। আরমান তাদের বলয়ের বাইরের লোক। তাই প্রমোশন আটকে আছে বছরের পর বছর। যখনই যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁর নাম ওঠে, তখনই কোথা থেকে যেন বাধা আসে। অফিসের করিডোরে ফিসফিসানি চলে। কে কোন নেতার লোক, কে কার অনুসারীএই হিসেব কষতে কষতেই দিন যায়। আরমানের সহকর্মী মোবারক সাহেব, যিনি বছর পাঁচেক আগে আরমানের সাথে একই পোস্টে যোগ দিয়েছিলেন, এখন তিনি দুটো প্রমোশন পেয়ে উপরে উঠে গেছেন। কারণ একটাইতিনি ওপরওয়ালার পছন্দের লোকের ঘনিষ্ঠ। আর্মান এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। নীতি আর সততা এখানে মূল্যহীন। তাঁর স্বল্প আয়ের ওপর এই অদৃশ্য রাজনৈতিক প্রভাব যেন পাহাড়ের মতো চেপে বসেছে।

শীলা বাসায় একা থাকেন। রোহান স্কুলে চলে যাওয়ার পর পুরো ফ্ল্যাটটা খাঁ খাঁ করে। আগে মাঝে মাঝে শাশুড়ি আসতেন, ননদ আসত। এখন আর কেউ আসে না। শহরে সবাই ব্যস্ত। নিজের পরিবার নিয়েই হিমশিম খাচ্ছে। গ্রাম থেকে বাবা-মা ফোন করেন বটে, কিন্তু তাঁদেরও নিজেদের চিন্তা। ভাই-বোনেরাও যে যার মতো। শীলারও ইচ্ছা করে সবার সাথে দেখা করতে, গ্রামের বাড়িতে যেতে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই তো আর হয় না। যাতায়াতের খরচ, সেখানে গেলে কিছু উপহার দেওয়াসব মিলিয়ে যে টাকা লাগবে, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে? তারচেয়ে ভালো, এই চার দেয়ালের মধ্যেই নিজেকে গুটিয়ে রাখা। রান্না, গোছগাছ, দুপুরের খাওয়া, বিকেলে একটু বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচে চলমান ব্যস্ত জীবন দেখাএভাবেই দিন কাটে। মাঝে মাঝে একাকীত্ব এমনভাবে জেঁকে বসে যে মনে হয় চিৎকার করে কাঁদতে। পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীদের সাথে টুকটাক কথা হয় বটে, কিন্তু সে এক অন্য জগৎ। তাদের ফ্লাটে দামি আসবাব, তাদের স্বামীরা মোটা মাইনের চাকরি করে, তাদের ছেলেমেয়েরা নামী স্কুলে পড়ে। শীলা তাদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। কোথায় যেন একটা হীনমন্যতা কাজ করে। এই একাকীত্ব আর হীনমন্যতা শীলার ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যায়।

রোহান এখন কৈশোরে। তার জগৎটা অন্যরকম। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটেই তার বেশিরভাগ সময় কাটে। বাবা-মায়ের অভাব-অনটনের কথা সে বোঝে, কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে তারও কিছু চাহিদা আছে। বন্ধুদের দামি ফোন, ব্র্যান্ডেড পোশাক, বিকেলে একসাথে আড্ডা দিতে যাওয়া, ফাস্টফুডের দোকানে খাওয়াএসব যখন সে দেখে, তখন নিজের সীমাবদ্ধতার জন্য তার মন খারাপ হয়। বাবার কাছে কিছু চাইতে গেলে বাবার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যায়, মায়ের গায়ে মলিন শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে তার কষ্ট হয়। তাই সে বেশিরভাগ সময়ই কিছু চায় না। নিজের ঘরে একা একা থাকে। অনলাইনে বন্ধুদের সাথে গেম খেলে, চ্যাট করে। বাইরের ঝলমলে জগৎ আর ভেতরের দারিদ্র্যএই দুইয়ের টানাপোড়েনে তার ভেতরেও এক ধরণের একাকীত্ব দানা বাঁধে। বাবা-মা তাকে বোঝে না ভাবে। বাবা শুধু পড়াশোনা করতে বলেন, মা শুধু এটা ধরিস না, ওটা করিস নাএসব বলেন। তার ভেতরের জগতটা সম্পূর্ণ নিজের, সেখানে কারো প্রবেশাধিকার নেই।

পরিবারের ভেতরেও টানাপোড়েন লেগেই থাকে। সামান্য বিষয় নিয়েই শুরু হয় মনোমালিন্য। শীলা হয়তো সংসারের খরচের হিসেব দিতে গিয়ে বলেন, ‘এইভাবে আর চলছে না। কিছু একটা ব্যবস্থা করো।’ আরমান বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘কী ব্যবস্থা করবো? চুরি করবো? যা রোজগার করি, তার পুরোটাই তো দিয়ে দিই। আমার কি কোনো শখ আহ্লাদ নেই?’ কথার মোড় ঘুরে যায় ব্যক্তিগত অভিযোগে। আরমান বলেন, ‘সারা দিন বাসায় থাকো, বোঝো না বাইরে কত চাপ।শীলা বলেন, ‘আমি কি খুব সুখে আছি? চার দেয়ালের মধ্যে একা একা কি দিন কাটে?’ রোহান এসব দেখলে চুপ করে নিজের ঘরে চলে যায়। বাবা-মায়ের এই লড়াইয়ে সে যেন এক নির্বাক দর্শক।

একদিন বড় সংকট এলো। শীলার হঠাৎ খুব জ্বর হলো। দুদিন কাছের একটা  ফার্মেসী থেকে প্যারাসিটামল এনে খাওয়ালেন আরমান কিন্তু জ্বর কমলো না। বরং বাড়তে লাগল। সাথে অসহ্য কাশি আর শ্বাসকষ্ট। আরমান ভয় পেয়ে গেলেন। পরিচিত এক ডাক্তারকে ফোন করলেন। তিনি বললেন, হাসপাতালে ভর্তি করাতে। শুনে আরমানের বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠল। হাসপাতালে ভর্তি! সে তো অনেক টাকার ব্যাপার!

তবুও যেতে হলো। কাছের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন শীলাকে। ইমার্জেন্সিতে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ডাক্তার বললেন, নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে সিট খালি নেই। দরকার হলে প্রাইভেট কেবিনে রাখতে হবে। নাহলে বাইরে থেকে ভালো করে চিকিৎসা করানো কঠিন হবে। প্রাইভেট কেবিন! সে তো দিনের ভাড়া তিন-চার হাজার টাকা! ঔষধপত্র, টেস্টসব মিলিয়ে খরচ আকাশছোঁয়া।

আরমানের মাথায় বাজ পড়ল। জমানো টাকা যা ছিল, তা দিয়ে বড়জোর কয়েকদিন হয়তো চালানো যাবে। এরপর কী হবে? অফিসের বড় সাহেবের কাছে একবার যাবেন কিনা ভাবলেন। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল, তিনি তো এখন মোবারক সাহেবের সাথে ঘনিষ্ঠ। আরমানকে দেখলে চিনতেও চাইবেন না হয়তো। কে দেবে ধার? স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ধার দেওয়া লোকের সংখ্যা বড্ড কম। আত্মীয়স্বজন যারা আছে, তারাও সবাই প্রায় একই রকম।

অফিসে গিয়ে আরমান মনমরা হয়ে বসে রইলেন। দুপুরের খাবারের বিরতিতে মোবারক সাহেব এসে পাশে বসলেন। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললেন, ‘কী ব্যাপার আরমান ভাই? মন খারাপ?’ আরমান ইতস্তত করে শীলার অসুস্থতার কথা বললেন। মোবারক সাহেব সব শুনে বললেন, ‘আহারে! সমস্যা তো বটে। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাওয়াও মুশকিল। এক কাজ করো। আমাদের বড় সাহেবের সাথে কথা বলেছিলে? উনি চাইলে অনেক কিছুই পারেন।’ আরমান হতাশ হয়ে বললেন, ‘আর বলেন না ভাই। আমার কপালটাই খারাপ। সাহেব তো আমার দিকে ফিরেও তাকান না।মোবারক সাহেব অনেকটা রহস্যের সুরে বললেন, ‘আসলে ভাই, এই দুনিয়ায় সবকিছুই হয় যোগাযোগের মাধ্যমে। তুমি তো জানোই, আমাদের অফিসের অমুক টেন্ডারটা নিয়ে খুব ঝামেলা চলছে। বড় সাহেব খুব চাপে আছেন। যদি এই সময় তাকে একটু সাহায্য করতে পারো, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই মুখ ফিরিয়ে নেবেন না।’ আরমান বুঝতে পারলেন মোবারক সাহেব কী বলতে চাইছেন। অফিসের একটি বড় টেন্ডার নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছিল। আরমানের কাছে সেই টেন্ডার সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল, যা ফাঁস হলে বড় সাহেবের সমস্যা হতে পারত। এতদিন আরমান সেগুলোকে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোবারক সাহেব বললেন, ‘শোনো আরমান ভাই, আমি জানি তুমি খুব সৎ লোক। কিন্তু সৎ থেকেও সবসময় বাঁচা যায় না। তোমার স্ত্রীর জীবন এখন সঙ্কটে। সামান্য কিছু কাগজপত্রের জন্য তোমার স্ত্রী বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে, এটা কি ঠিক?’

আরমান চুপ করে রইলেন। তাঁর ভেতরে ঝড় বইছে। একদিকে নীতি, সততা আর অন্যদিকে স্ত্রীর জীবন। এই দেয়ালঘেরা ছোট সংসারটার সুখশান্তি কি এতটাই ঠুনকো যে সামান্য রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে তাকে বিকিয়ে দিতে হবে? দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আরমান সিদ্ধান্ত নিলেন। স্ত্রীর জীবন আগে। নীতির সাথে সামান্য আপস করাটা হয়তো এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি।

বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়ে আরমান সরাসরি মোবারক সাহেবের কাছে গেলেন। তাঁর হাতে অফিসের একটি সিল করা খাম। খামটি মোবারক সাহেবের হাতে দিয়ে আরমানের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। মনে হলো নিজের সত্তার একটা অংশ যেন বিক্রি করে দিলেন। মোবারক সাহেব মুচকি হেসে বললেন, ‘চিন্তা করো না ভাই। আমি বড় সাহেবকে বলে দেবো। উনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন।

পরের তিনদিন আরমানের জন্য এক অস্থির সময় গেল। বড় সাহেবের সৌজন্যে শীলাকে সরকারি হাসপাতালেরই ভিআইপি কেবিনে স্থানান্তর করা হলো। ভালো চিকিৎসা শুরু হলো। মোবারক সাহেব নিজে এসে আরমানকে কিছু টাকা ধার দিয়ে গেলেন। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে দেখে আরমানের বুকের ভার কিছুটা নামল। কিন্তু ভেতরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে রইল। তিনি জানেন, এই সাহায্যের বিনিময়ে তাকে কী মূল্য দিতে হয়েছে। টেন্ডারের সেই কাগজপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বড় সাহেব রক্ষা পেয়েছেন, কিন্তু অন্য কারো হয়তো ক্ষতি হয়েছে। রাজনীতির এই নোংরা খেলায় তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন খেলোয়াড় হয়ে গেছেন।

রোহান মায়ের অসুস্থতার সময় অনেকটাই চুপচাপ ছিল। সে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল পরিস্থিতি কতটা জটিল। যখন মা একটু সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন, তখন আরমান একদিন রোহানকে ডেকে পাশে বসালেন। এই প্রথম আরমান তাঁর অফিসের ভেতরের কথা, তাঁর অসহায়ত্বের কথা, স্বল্প আয়ের যন্ত্রণা আর রাজনীতির নোংরা দিকটা ছেলের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করলেন। রোহান মন দিয়ে বাবার কথা শুনল। বাবা যে শুধু একজন রোজগেরে মানুষ নন, তারও যে কষ্ট আছে, লড়াই আছেএটা সে নতুন করে উপলব্ধি করল। এতদিন বাবা-মায়ের ঝগড়া বা নীরবতা দেখে সে শুধু নিজের ঘরে গুটিয়ে যেত। আজ বাবার মুখে সব শুনে তার সেই একাকীত্ববোধটা একটু হলেও কমল। বাবার প্রতি তার একধরণের সহানুভূতি তৈরি হলো।

শীলা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন। শরীর দুর্বল, মন ভেঙে আছে। হাসপাতালের অভিজ্ঞতা তাকে আরও একা করে দিয়েছে। মনে হয়েছে, এই বিশাল শহরে তারা জন বড্ড অসহায়। অসুস্থ হলে পাশে দাঁড়ানোর তেমন কেউ নেই। সামান্য কিছু টাকার জন্য কত চিন্তা, কত কষ্ট। সুস্থ হয়ে সংসারের দায়িত্বটা আবার কাঁধে নিলেন। কিন্তু আগের সেই শক্তি আর উদ্দীপনা নেই। ভেতরে ভেতরে একটা ভয় কাজ করেআবার যদি কিছু হয়? আবার যদি টাকার দরকার পড়ে?

আরমানের জীবনেও সব আগের মতো নেই। অফিসের নতুন সমীকরণ তাকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। বড় সাহেব এখন তার সাথে ভালো ব্যবহার করেন বটে, কিন্তু সেই ভালো ব্যবহারের পেছনে রয়েছে একটা হিসাব। আরমান জানেন, তিনি বিক্রি হয়ে গেছেন। মনটা বিষণ্ণ হয়ে থাকে। স্বল্প আয়, রাজনৈতিক চাপ, সংসারের টানাপোড়েনসব মিলিয়ে জীবনটা যেন এক ধূসর চাদরে ঢেকে গেছে।

তবুও জীবন থেমে থাকে না। সকাল হয়, রাত নামে। আরমান রোজ সকালে অফিসে যান, শীলা ঘর সামলান, রোহান স্কুলে যায়। এই দেওয়ালঘেরা ছোট ফ্ল্যাটটির ভেতরে তাদের নিজস্ব জগৎ। বাইরে থেকে দেখলে হয়তো মনে হবে, আর দশটা সাধারণ পরিবারের মতোই তারা আছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের লড়াইটা চলে নিরন্তর। স্বল্প আয়ের সাথে লড়াই, একাকীত্বের সাথে লড়াই, রাজনৈতিক প্রভাবের সাথে লড়াই, আর এই সবকিছুর ফলে সৃষ্ট টানাপোড়েন আর সংকটের সাথে লড়াই।

রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন আরমান বারান্দায় এসে দাঁড়ান। নিচে শহরের আলো জ্বলতে থাকে। সারি সারি বিল্ডিং, শত শত ফ্ল্যাট। মনে হয়, এই প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভেতরেই হয়তো চলছে কোনো না কোনো নীরব যুদ্ধ। আধুনিক একক পরিবার হয়তো এভাবেই টিকে আছেদেওয়ালঘেরা এক একটি দ্বীপে, নিজস্ব সংকট আর একাকীত্বকে সঙ্গী করে, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে চেয়ে। স্বল্প আয় আর রাজনৈতিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও তারা তবু স্বপ্ন দেখেএকদিন হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। ধূসর দেয়ালের ওপার থেকে হয়তো একদিন উঁকি দেবে এক টুকরো রোদ। কিন্তু সেই রোদ কবে আসবে, তা কেউ জানে না। আপাতত এই ধূসর বাস্তবতাই তাদের একমাত্র ঠিকানা।

প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন লেখা পড়তে ভিজিট করুন: Tech News BD

ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন লেখা পড়তে ভিজিট করুন: The Divine Path

খেলাধূলা বিষয়ক বিভিন্ন লেখা পড়তে ভিজিট করুন: Sports Bangladesh



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url